Fri. Aug 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1kখোলা বাজার২৪, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতি, উৎপাদন বন্ধ ও নিয়মিত লোকসানের কারণে ১৯৯৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হয়েছে ৩৬টি কোম্পানি। এসব কোম্পানিতে আটকে আছে বিনিয়োগের ১৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আইনের ফাঁকফোকর আর নানা অজুহাতে পার পেয়ে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো। ২২ বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরে পুঁজি না পেয়ে অসহায় বিনিয়োগকারীরা।
তালিকাচ্যুত কোম্পানিতে বিনিয়োগ উদ্ধারে বিএসইসির নেই কোনো আইন বা নীতিমালা। ক্ষমতা না থাকায় কোম্পানির বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা নিতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একদিকে আইনি দুর্বলতায় পার পাচ্ছে কোম্পানিগুলো অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসির সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা বলছেন, কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী কোনো কোম্পানি অবলুপ্ত হলে শেয়ারহোল্ডারদের দায়-দেনা মিটিয়ে দিতে পরিচালনা পর্ষদ বাধ্য থাকবে। না দিলে আদালতে যাবে বিনিয়োগকারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপুল অঙ্কের এ টাকা তালিকাচ্যুত কোম্পানির শেয়ারের ফেসভ্যাল্যু হিসেবে। তবে তালিকাচ্যুতির সময় ওই সব কোম্পানির শেয়ারের দর আরো বেশি ছিল। একইসঙ্গে ওই সব কোম্পানির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ হিসেবে ধরলে আটকে পড়া বিনিয়োগের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে।
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, তালিকাচ্যুত কোম্পানির অর্থ ফেরতের বিষয় সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। এক্ষেত্রে বিএসইসির কোনো ক্ষমতা নেই।
তিনি আরো বলেন, কোনো কোম্পানি তালিকাচ্যুত হলে অর্থ উত্তোলনে বিনিয়োগকারীদের প্রথমে আদালতে যেতে হবে। আইন অনুয়ায়ী কোম্পানি দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ শেয়ার হোল্ডারদের মাঝে বন্টন করবে।
শেয়ারবাজারে সব কোম্পানি লাভ করতে পারে না। এখানে ভালো-খারাপ দুদধরনের কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বলছেন, একটি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার সময় সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। স্টক এক্সচেঞ্জকে কোনো কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ফেরতের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগ সুরক্ষা তহবিল গঠন করা প্রয়োজন।
তালিকাচ্যুত হাওলাদার পিভিসি পাইপে বিনিয়োগকারী কবির আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, বিনিয়োগকারীদের টাকা লুট করে আরাম আয়েশে পরিচালকরা দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমি বেশ কিছু টাকা হাওলাদার পিভিসিতে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু এ কোম্পানি তালিকাচ্যুত করায় কোম্পানির সঙ্গে সঙ্গে আমার টাকাও উধাও হয়ে গেছে।
অনেক ঘুরেছি কোনো সমাধান পায়নি। এখন বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পেতে না কী আদালতে মামলা করতে হবে। তাই এ টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তেমন কিছু করার থাকে না। তবে কোম্পানি যদি অবলুপ্ত হয় তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রাপ্য অংশ বুঝে নিতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো কোম্পানি অবলুপ্ত হওয়া অনেক সময় সাপেক্ষ। এছাড়া তালিকচ্যুতির পর অবলুপ্ত হওয়ার নজির নেই।
শাকিল রিজভী আরো বলেন, তালিকাচ্যুতির আগে একটি কোম্পানি ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে থাকে। ওটিসিতে থাকা অবস্থায় কোম্পানির পরিস্থিতি খারাপ হলে সেটি অন্য কোনো ভালো কোম্পানির সঙ্গে একিভূত করা যেতে পারে। আবার ব্যবস্থাপনা বা মালিকানাও পরিবর্তন করা যেতে পারে। এজন্য ওটিসি মার্কেটকে আরো সক্রিয় ও কার্যকর করা প্রয়োজন।
একই সঙ্গে কোম্পানির অবলুপ্তির পদ্ধতি সহজ করলে কোনো কোম্পানি তালিকাচ্যুত হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ অনেকাংশে সুরক্ষিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, তালিকাচ্যুত ৩৬টি কোম্পানির দুই কোটি ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ২২৫টি শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। যার বাজার মূলধন ১৩১ কোটি ৩৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫শদ টাকা।
তালিকাচ্যুত ৩৬ কোম্পানি হলো- চাঁদ টেক্সটাইল, চাঁদ স্পিনিং, ডেল্টা জুট, গসিয়া জুট, প্যানথার স্টিল, আনোয়ারা জুট, স্পেশালাইজড জুট, শমসের জুট, পেপার কনভারটিং, হাওলাদার পিভিসি, অ্যারোমা টি, ফ্রগলেস, সোয়ান টেক্সটাইল, পি.পি.আই, মিলিয়ন টেনারি, নিউ ঢাকা মিলস, আহাদ জুট মিল, ইসলামি জুট মিলস, হাইস্পিড সিপ, মিউচ্যুয়াল জুট, বেঙ্গল স্টিল, করিম পাইপ, এবি বিস্কুট, ঢাকা ভ্যাজিটেবল, প্যারাগন লেদার, রূপন অয়েল, ন্যাশনাল অক্সিজেন, এসটিএম, জেম নিটওয়ার, জেএইচ কেমিক্যাল, মার্ক বাংলাদেশ, টেক্সপি ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা ভেজিটেবল, ঈগল বক্স, রাবেয়া ফ্লাওয়ার এবং ই এল কেমিক্যাল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব কোম্পানির মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল শুধু টাকা উত্তোলনের জন্যই। তালিকাভুক্তির আগের কয়েক বছর অধিক ব্যবসায়িক সাফল্য দেখানো হয়। যাতে সহজে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া যায়। প্রথম দুই-তিন বছর কোনো রকম ডিভিডেন্ড দিয়ে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলে এসব কোম্পানি। তারপর থেকে শুরু হয় অনিয়ম।
লিস্টিং ফি না দেয়া, শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করা, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা না করাসহ নানা ইস্যুতে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হয়। আর অসহায় হয় বিনিয়োগকারীরা।

অন্যরকম