Sat. May 10th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

21kখোলা বাজার২৪, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল। কোথাও কোনো অস্থিরতা নেই। সবকিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তবে কূটনৈতিকদের চাপে আগাম নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার। পশ্চিমা বিশ্ব সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক সচল রাখলেও তার মধ্যে এক ধরনের শিথিলতা রয়েছে।
এছাড়া মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার মার্কিন সিনেটে অনুষ্ঠিত এক শুনানিতে লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘খাটো’ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দিতে সহায়তা করতে পারে।
গত কয়েক দিন থেকে কয়েকটি পত্রিকায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে রাজনীতির অন্দরমহলে। নানা হিসাব মেলাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। কবে হবে সেই নির্বাচন? নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সমস্যার সমাধান কোন পথে এগুবে? এ নিয়ে হিসাব মেলাচ্ছেন রাজনীতিবিদরা।
ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রশ্নে আদালত অঙ্গন একমত হতে পারেনি। একজন অ্যামিকাস কিউরি ছাড়া সবাই মত দিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে। বিচারপতিরাও একমত হতে পারেননি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে অবৈধ ঘোষিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। তা নিয়ে নানা বিতর্ক। তবে একটি প্রশ্নে আদালত অঙ্গন একমত পোষণ করেছিল, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত।
যদিও সরকারের মন্ত্রীরা বারবারই বলছেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। এবং সংবিধানও তা বলছে। তবে কৌশলগত কারণে এরআগেও মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রের আভাস। কয়েকমাসের মধ্যেই দৃশ্যপটে নতুন মোড় নিতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অন্তত একটি মামলা চূড়ান্ত পরিণতির পথে রয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা শেষ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বেশ কয়েকটি মামলাও পরিণতি লাভ করতে পারে দ্রুতই। এসব মামলার রায় বিরুদ্ধে গেলে বিএনপির প্রধান দুই নেতা নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলার পরিণতি লাভের পর দেশ নির্বাচনের দিকে যেতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো পর্যবেক্ষক। এরআগে কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হতে পারে। দলটির নেতৃত্বে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না হলেও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আসতে পারে। উত্তরাধিকারের রাজনীতিও একটি নতুন ধাপে যেতে পারে এ কাউন্সিলের মাধ্যমে।
আগাম নির্বাচনের চিন্তার পেছনে আন্তর্জাতিক মহলের মনোভাবও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। পশ্চিমা দুনিয়া সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক সচল রাখলেও তার মধ্যে এক ধরনের শীতলতা রয়েছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে পশ্চিমা শক্তি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মনে করে না। তাদের মতে, ওই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়নি। তারা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে তাদের অবস্থান বারবারই ব্যক্ত করেছে। প্রকাশ্যে সরকার, এসব বক্তব্যকে নাকচ করে আসছে। তবে ভারতসহ কয়েকটি দেশ বরাবরই সরকারের পক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছে। বাংলাদেশে কেমন নির্বাচন হলো- এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কোনো মাথা ব্যথা নেই। বাংলাদেশে বেশ কিছু জঙ্গি হামলাও সরকারের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছিল। এখন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কিছু জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। জঙ্গি সংগঠন আইএস এসব হামলার দায় স্বীকার করেছিল। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই ওইসব দাবি উড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর তরফে এও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে আইএস আছে তা স্বীকার করানোর জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে বুধবার সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট ও এ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে তারা দেশের প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার ও মত প্রকাশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন তারা। একইসঙ্গে ইইউ’র এ প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নতুন নির্বাচনের প্রস্তাব দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
তিন দিনের সফরের সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে সফরসূচিতে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কোনো সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রাখা হয়নি।
২০১৪ সালের পর এবারই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কোন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে। এর আগে ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি কেমন তা দেখতে জিন ল্যাম্বার্টের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২০১৪ সালের মার্চে ঢাকা সফর করেছিল। এছাড়া গত নভেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর এ সফরটি হচ্ছে। ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার মার্কিন সিনেটে অনুষ্ঠিত এক শুনানিতে লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। খবরটি প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এপি।
মঙ্গলবার বৈশ্বিক হুমকির বিষয়ে মার্কিন সিনেটে অনুষ্ঠিত ঐ শুনানিতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে জেমস ক্ল্যাপার বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হওয়া ১১টি গুরুতর হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট। এছাড়া ২০১৩ সাল পর্যন্ত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং আল কায়েদা বাংলাদেশের ১১ জন প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগারকে হত্যা করেছে।
তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘খাটো’ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দিতে সহায়তা করতে পারে।
এপির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহনশীলতাসম্পন্ন একটি মুসলিম রাষ্ট্র। তবে দেশটিতে চরমপš’’ী সহিংস কর্মকা- ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশে যে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উপস্থিতির কথা বারবারই অস্বীকার করেছে শেখ হাসিনা সরকার। সেইসাথে দেশে সংঘটিত বিভিন্ন সহিংসতার জন্য ইসলামপš’’ী রাজনৈতিক দল ও বিরোধীদলকে দায়ী করেছে তারা।