খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: দলভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে দেওয়া হচ্ছে না।
ইসি সচিবালয় সংশোধিত নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধির যে খসড়া ভেটিংয়ে পাঠিয়েছিল, তাতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের হাতে রাখার প্রস্তাবে সায় দেয়নি আইন মন্ত্রণালয়। অবশ্য পৌরসভার নিয়মের আদলে ইসির বাকি প্রস্তাবগুলো মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেয়েছে।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে পাঠানো আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর স্বাক্ষরিত দুটি বিধিমালায় এ তথ্য মিলেছে।
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আইনে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে তা ছিল না। এবার তা চেয়েছিল ইসি।
অবশ্য অতীতে কখনো কোনো নির্বাচনে বিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিলের নজির না থাকায় তিনজন নির্বাচন কমিশনার এবার ইউপিতে তা যুক্ত করার বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের দ্বিমত থাকলেও শেষ পর্যন্ত ওই ক্ষমতা হাতে রেখেই খসড়া চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ে পাঠানো হয়।
ইসির প্রস্তাবে ছিল (আচরণবিধির ৩২ ধারা)- যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড বা লিখিত প্রতিবেদনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে ইসির কাছে প্রতীয়মান হলে তাৎক্ষণিক তদন্ত করে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল করা যাবে।
কমিশনের আইন শাখার উপ সচিব মহসিনুল হক বলেন, “ইউপিতে প্রথমবারের মতো প্রার্থিতা বাতিলের নতুন ধারা যুক্ত করে আচরণবিধি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এ ধারাটি ভেটিংয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, বুধবার কমিশন সভায় ভেটিং করা দুটো বিধিমালাই অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে গেজেটের জন্য।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, “আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংসহ আমরা দুটো বিধিমালা পেয়েছি। এখন কমিশন সভায় তা পর্যালোচনা করে অনুমোদন করা হবে; তারপর ফের মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সংশ্লিষ্ট বিধিমালা জারির বিষয়ে এসআরও নম্বর পড়লেই ইসি সচিবালয় গেজেট করবে।”
নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধি’র গেজেট প্রকাশের পর নিয়ম মেনে দলভিত্তিক মনোনয়নপত্রসহ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় ফরম ছাপানো শেষ করতে পারলেই ইউপির প্রথম ধাপের তফসিল দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার থেকে রোববারের মধ্যে তফসিল দেওয়ার প্রস্তুতির রয়েছে বলেও এ নির্বাচন কমিশনার জানান।
ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের বিধান থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
আর বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় দলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনেও সম পরিমাণ জরিমানার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম জানান, ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে রাখা হয়েছে। বিধিমালা জারির পরপরই আইন-বিধির আলোকে সব সামগ্রী সরবরাহ ও মুদ্রণ শুরু হবে। ইতোমধ্যে প্রেসের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশের ৯ কোটি ৯৯ লাখ ভোটারের মধ্যে অন্তত ৭ কোটি ৭০ লাখ ভোটার রয়েছে সাড়ে চার হাজার ইউপিতে।
এই হিসাবে দেশের সব ইউপির জন্য চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদ মিলিয়ে ২৩ কোটি ১০ লাখ ৬৬ হাজার ব্যালট পেপার ছাপতে হবে এবার।
নির্বাচন উপযোগী ৪ হাজার ২৭৯টি ইউপির মধ্যে প্রথম ধাপে ৭০০ ইউপির ভোট হবে মার্চে। রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি প্রেসে পর্যায়ক্রমে মুদ্রণ কাজ শুরু করা যাবে বলে সভায় জানানো হয়।