Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16খোলা বাজার২৪বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: ওর গায়ের রং কালো। লেখাপড়াও শিখাতে পারিনি। মেয়েটিকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। প্রতিযোগিতার দিন আমাদের ফোন দিয়ে বলেছে বাবা আমাকে টিভিতে দেখাবে। সবাই মিলে দেখ। ওইদিন কাজে যাইনি। ওর মা বলল একদিন কাজে না গেলে কী হয়। মেয়েটিকে টিভিতে দেখব। সবাই মিলে বসে আছি টিভির সামনে। ও জয়ী হয়েছে। আমরা চিৎকার দিয়ে উঠেছি। এই আনন্দের মাঝেও দেখি ওর মা চোখে আঁচল দিয়ে কাঁদছে। আমার বুকটাও মুচর দিয়ে উঠল। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে আমার মেয়ে কাঁদছে আমরাও এখানে দেশে বসে কাঁদছি।
মাবিয়ার বাবা বলেন, কখনও বেবিটেক্সি কখনও সিএনজি অটোরিকশা আবার কখনও পান দোকান দিয়ে কষ্ট করে সংসার চালিয়ে আসছি। বড় মেয়ে ও ছেলেকে ভালোভাবে লেখাপড়া করাতে পারিনি। এরপর আবারও একটি মেয়ে এলো সংসারে। তার গায়ের রংও কালো। চরম হতাশা নিয়েই কাটত দিন। তবে এবার সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে স্বর্ণপদক জেতায় খুব খুশি আমি। আমি আশা করি চাই মেয়েটা অলিম্পিক গেমস-এ আবারও স্বর্ণপদক পাবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সবুজবাগে সিপাহীবাগের ঝিলের মধ্যে টিনশেড বাসায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবারের এসএ গেমসে দেশের প্রথম স্বর্ণ বিজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্তের বাবা হারুন অর রশিদ। একই সঙ্গে তার মা আক্তার বানুরও খুশিতে চোখে জল দেখা গেছে। চরম উদ্বেলিত এই পরিবারের সকলেই মাবিয়ার প্রশংসা করছিলেন। তবে হতাশা আর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবচিন্তিত হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, খিলগাঁও মডেল স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর আর পড়তে চায়নি মাবিয়া। তবে খেলাধুলার প্রতি তার ঝোঁক ছিল বেশি। ওর মামা কাজী শাহাদাতই মূলত মাবিয়াকে উৎসাহ যুগিয়েছে। মাবিয়ার প্রথম ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ২০০৭ সালে সিপাহীবাগ ক্লাবে। ওই প্রতিযোগিতায় সে রূপা পদক পেয়েছিল। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে ১২টি দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় মাবিয়া।
হারুন অর রশিদ বলেন, মাবিয়ার জšে§র ১ মাস পর মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে মাবিয়াকে দেখে বলেছিলেন, তোর মেয়েটা তো এমনিতেই কালো। তবে তার কিন্তু রাশিও ভালো। মাবিয়ার রাশি বিদেশ ভ্রমণের রাশি।
সিপাহীবাগ বাজার থেকে কিছু দূরে ঝিলের মধ্যে মাবিয়াদের টিনশেড দুই কক্ষের ঘর। সরু বাঁশের সাঁকো দিয়ে বেশ কিছুদূর এগোলে কক্ষের প্রবেশপথ। এভাবে আরও ঘর রয়েছে ৭-৮টি।
মাবিয়ার বাবা জানান, ১৯৮২ সালে মাদারীপুর থেকে পেটের দায়ে ঢাকা আসেন। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। কখনও বেবিটেক্সি কখনও সিএনজি অটো আবার কখনও পান দোকান দিয়ে চলত সংসার। এক ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মাবিয়া। বড় দুজনকেও তেমন পড়ালেখা করাতে পারেননি অর্থাভাবে। শ্বশুরের দেওয়া এক টুকরো ঝিলের জমিতে (২ কাঠা) টিনশেড দিয়ে বানানো ঘর আবার ভাড়াও দিয়েছেন। নিজেদের দুটি ঘর ছাড়া বাকিগুলো ভাড়াটেরা থাকেন। প্রতিটি ঘর থেকে ২ হাজার টাকা করে ভাড়া পান। আর বাসার প্রবেশ মুখে একটি টং দোকান (পান দোকান) রয়েছে। সেটিই মূলত আয়ের অন্যতম উৎস। তিনি বলেন, বিভিন্ন খেলাধুলায় তার মেয়েটি ভালো করছে। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার কারণে কোনো ভালো সহযোগিতা করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
প্রসঙ্গত, গত রোববার ভারতের গুয়াহাটির ভোজেশ্বরী ফুগনোনি ইনডোর স্টেডিয়ামে মেয়েদের ভারোত্তোলনে বাংলাদেশকে স্বর্ণপদক এনে দিলেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। তিনি ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে এই স্বর্ণপদক জিতেছেন। এর আগে ভারতের পুনেতে সিনিয়র, জুনিয়র ও ইয়ুথ কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জেতেন মাবিয়া। এছাড়া ওই সময় তিনি ২টি রৌপ্য পদকও জেতেন।