Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

6kখোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: বাউন্ডারি হতেই কয়েকজন খেলোয়াড় জায়গায় বসে পড়লেন; দু’ একজন সইতে না পেরে ঘাসের ওপর মুখ গুঁজলেন শুয়ে পড়ে। দ্রুতই নিজেদের সামলে নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন। চেষ্টা করলেন আবেগটা চেপে রাখার। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোকে দেখে বোঝা গেলো কী তীব্র কষ্ট পেয়েছেন এই কিশোররা।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনৎালে ফেবারিট বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে হেরে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ করতে পেরেছিল ২২৬ রান। তীব্র লড়াইয়ের পর সে লক্ষ্য টপকে যায় ক্যারিবিয়রা।
এই হারের পরও একটা লড়াই বাকি আছে। আগামী ১৩ ফেব্র“য়ারি ফতুল্লায় বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে লড়বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তারপরও সে লড়াইয়ে কী আর সান্ত্বনা মিলবে!
টুর্নামেন্ট জুড়ে টগবগ করতে থাকা বাংলাদেশের দিনটা শুরু হয়েছিল টপ অর্ডারের ব্যর্থতায়। ক্যারিবিয়ান পেস তোপে তারা ৫ উইকেট হারিয়ে বসে ১১৩ রানেই। খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। টুর্নামেন্টে তৃতীয় অর্ধশতক করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের সঙ্গে ৮৫ রানের জুটিতে দলকে এনে দেন ২২৬ রানের পুঁজি।
রানটা লড়াই করার মতোই, কিন্তু প্রথম ২৫ ওভারে বাজে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে ম্যাচের লাগাম নিতে পারেনি বাংলাদেশ। পরে নিজেদের শুধরে চেষ্টা করেছে ফেরার, কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
কৃতিত্ব দিতে হবে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদেরও। ওপেনার গিডরন পোপের ঝড়ে ৫ ওভারেই ৪৫ রান তুলে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংস জুড়ে তাই কখনও রান রেটের চাপে পড়তে হয়নি ব্যাটসম্যানদের।
বড় ম্যাচে মাঝারি সংগ্রহের চাপেই কিনা, টুর্নামেন্টে অসাধারণ ফিল্ডিং করা বাংলাদেশ সেমি-ফাইনালে হঠাৎ করেই ভেঙে পড়ে। ২৩ রানে পোপের সহজ ক্যাচ ছাড়েন সালেহ আহমেদ শাওন গাজী। প্রথম ওভারেই মিরাজকে দুটি চার ও একটি ছক্কায় শুরু করেন পোপ।
শাওন গাজী পরে এক ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে জমিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাচ। কিন্তু বাংলাদেশের সামনে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান শামার স্প্রিঙ্গার। বল হাতে ২ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে প্রচণ্ড চাপের মাঝে ৬২ রানের অসাধারণ অপরাজিত ইনিংস; ম্যাচসেরায় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না স্প্রিঙ্গারের।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শর্ট বলে স্রোতে নড়বড়ে হয়েই কিনা, পিনাক আউট হন বাজে এক বলে। ব্যর্থতার বলয় থেকে বের হতে পারেননি আরেক ওপেনার সাইফ হাসানও। জোসেফের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে একটু দেরি করে ফেলেছিলেন, ধরা পড়েন শর্ট স্কয়ার লেগে।
জোড়া ধাক্কার পরও প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল ২ উইকেটে ৪৮। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সেরা শুরু! আগের ৪ ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল যথাক্রমে ৩৭, ১৯, ৩৮ ও ২১। সকাল ৯টায় শুরু ম্যাচে প্রথম ১০ ওভার নিয়েই ছিল শঙ্কা। কিন্তু সে সময়টা মোটামুটি উতরে গিয়েও বাংলাদেশ গড়বড় করে পরে। একের পর এক ব্যাটসম্যান ফেরেন বাজে শটে।
এরপরই মিরাজ-সাইফুদ্দিনের জুটি। প্রথম ৩০ ওভারে স্পিন আনেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ার। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বোলিং করান প্রথম চার পেসারকেই। আরেক পেসার কিমো পল ফিল্ডিংয়ে চোট পেয়ে ওই সময় বোলিং করতে না পারায় বিপাকে পড়েন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। স্পিন আক্রমণে আসায় স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান।
থিতু হওয়ার পর পেসারদের বিপক্ষেও দারুণ খেলেছেন দু’জন। সিঙ্গেল-ডাবলস নেয়ার ফাঁকে বাজে বলকে দিয়েছেন প্রাপ্য সাজা। চোট কাটিয়ে বল হাতে নিয়েই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থমকে দেন কিমো পল। ৪৬তম ওভারে পর পর দু’ বলে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকেই ফিরিয়ে দেন এই মিডিয়াম পেসার।
টুর্নামেন্টে তৃতীয় অর্ধশতকের পর শর্ট বল আকাশে উড়িয়ে ধরা পড়েন মিরাজ। পরের বলেই ডাউন দা উইকেটে খেলে লাইন মিস করে ৩৬ রানে বোল্ড হন সাইফুদ্দিন। পরের ওভারে পল ফিরিয়ে দেন সাইদ সরকারকেও (২)। শেষ ২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ২২৬ রানে থমকে যায় বাংলাদেশ।