Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

26kখোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বুধবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একপর্যায়ে সতর্ক করে দিয়েছেন দলীয় নেতাদের। তিনি বলেছেন, দলের কে কোথায় কী করছেন তা তাঁর জানা আছে। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য। বৈঠকে এক নেতা দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কো-চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব দেন। দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতার আপত্তির মুখে পরে সিদ্ধান্ত হয়, চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান উভয় পদেই নির্বাচন হবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক নেতা জানান, খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি নানা ধরনের কথা শুনি। এই নেতা সেখানে গেছেন, সেই নেতা ওর সঙ্গে বৈঠক করছেন, ষড়যন্ত্র করছেন। কে কোথায় কী করছেন তা আমি জানব না এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আপনারা যা করছেন বা করতে চান তার চেয়েও বেশি তথ্য আমার কাছে রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জেলে, বাসায় কিংবা অফিসে বসে কারা ষড়যন্ত্র করছেন, আমি সবই জানি। দল করতে চাইলে করেন, না হলে চলে যান। বিএনপিতে নেতার অভাব হবে না। ষড়যন্ত্র করলে তৃণমূলের রোষানলে পড়বেন।’
সূত্র মতে, প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে এক নেতা খালেদা জিয়ার কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। জবাবে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। বৈঠকে বেশির ভাগ সময়জুড়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন গয়েশ্বর রায়। একপর্যায়ে শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ঘিরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নিন্দা জানানো হয় বৈঠকে। ওই সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের চুপ থাকার সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা কেন একাট্টা হননি, খালেদা জিয়াকে সমর্থন করে বক্তব্য দেননি?
জানা যায়, বৈঠকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান থেকে তারেক রহমানকে কো-চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব রাখেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। দলের কয়েকজন নেতা এতে আপত্তি জানিয়ে বলেন, এটি না করলেও চলে। কারণ গঠনতন্ত্রে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্বের বিষয়ে বলা আছে, চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। আবার যেকোনো কারণে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তাই কো- চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি না করে বরং যে পদ রয়েছে তা আরো স্বচ্ছ করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, ফখরুলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিলেট জেলা, মহানগর ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হলেও তা সঠিকভাবে হয়নি। খুলনার রাজনীতি প্রসঙ্গে এক নেতা বলেন, ওই অঞ্চলের পুরোটাই দেখেন তরিকুল ইসলাম। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অন্য কোনো কেন্দ্রীয় নেতা ওই বিভাগে কোনো কর্মসূচির প্রধান অতিথি হন না। খালেদা জিয়াও তাঁকে সেভাবেই সম্মান দেন। কিন্তু এবার তাঁকে বাদ দিয়ে মির্জা ফখরুলকে প্রধান অতিথি করা হয়। বিষয়টি তরিকুলের ঘরানার নেতারা ভালোভাবে নেননি। ওই সময় তরিকুল বৈঠকে থাকলেও কোনো কথা বলেননি। সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে আলোচনাকালে কয়েকজন জানতে চান, মশিউর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থেকে কেন আবার জেলার দায়িত্বে থাকবেন?
ফখরুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলে বর্তমান দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। সূত্র মতে, কমিটির সদস্যদের কথা শোনার পর খালেদা জিয়া আরো কয়েকটি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগামী দিনে দলের সব স্তরে তরুণদের নেতৃত্বে আনা হবে। এ ছাড়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত নানাভাবে ফাঁস হয়ে যায় বলে উল্লেখ করে তিনি নেতাদের সতর্ক করেন। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আরেক সদস্য বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছু বলা যাবে না—এটা খালেদা জিয়ার নির্দেশনা।