Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

6kখোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : অশ্বিন-ধোনি পার্টনারশিপ কিন্তু আবার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করল। যে জুটি এর আগে সিএসকে-কে বেশ কয়েক বার আইপিএল দিয়েছে। যে জুটি রবিবারের পর বুঝিয়ে দিল, টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্টার্টিং ব্লক থেকে সবার আগে ছিটকে বেরোবে ভারতই। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে ভারতীয় ব্যাটিং ও পেস বোলিং নিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তাটা দূর হয়েছিল। দেশে ফিরে এসে এ বার স্পিনাররা, বিশেষ করে অশ্বিন নিশ্চয়ই ধোনিকে পুরোপুরি চিন্তামুক্ত করল। রাঁচি ও বিশাখাপত্তনম— পরপর এই দুই ম্যাচে ধোনি নিশ্চয়ই বুঝে নিল যে ও একটা কমপ্লিট টিম হাতে পেয়ে গিয়েছে। যে টিমটা নিয়েই এক মাস পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নামবে ভারত।
অশ্বিন যে পছন্দের উইকেটে পেলে ভয়ঙ্করতম হয়ে ওঠে, তা জানাই ছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ায় ও তেমন কার্যকর না হওয়ায় ভারতীয় দলের আকাশে একটা দুশ্চিন্তার মেঘ অবশ্যই জমেছিল। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, ফর্ম হারায়নি তো ভারতের এই সেরা অফ স্পিনার? রবিবার ওর ৪-৮ বোলিংয়ের পর সেই মেঘটা পুরোপুরি সরে গেল। যে ভাবে দেশি উইকেট কাজে লাগিয়ে অশ্বিন নিজের বোলিংকে একটা ধারালো অস্ত্রে পরিণত করছে, যে ভাবে বল টার্ন করাচ্ছে, তাতে এটা পরিষ্কার যে, যত ভাল ব্যাটিং সাইড-ই হোক না কেন, অশ্বিন সবাইকে ঝামেলায় ফেলতে পারে।
রবিবার বিশাখাপত্তনমে যে রকম উইকেট দেখা গেল, মনে হয় বিশ্বকাপের ভেনুগুলোতেও কমবেশি এমনই উইকেট থাকবে। এবং এ রকম উইকেট পেলে শুধু অশ্বিন নয়, জাডেজা-যুবরাজ-রায়নারাও কিন্তু বিপক্ষকে চাপে ফেলে দেবে। রিজার্ভ বেঞ্চে পবন নেগিও রয়েছে। অর্থাৎ, দলের স্পিন অ্যাটাক নিয়ে আর ভাবনা নেই।
ধোনির ক্যাপ্টেন্সি সবচেয়ে মারাত্মক হয়ে ওঠে যখন ও একটু স্লো উইকেটে বেশ কয়েক জন ভাল স্পিনারকে দলে পেয়ে যায়। সিএসকে-তে যেমন অশ্বিন-জাডেজার পাশাপাশি ও নেগিকে খেলিয়েছে। চাপের মুখে রায়নাকে এনে চমকে দিয়েছে। চেন্নাই সুপার কিংগসে ধোনি যে পছন্দের বোলিং আক্রমণটা পেয়েছিল, এ বার বিশ্বকাপে সেটাই পাচ্ছে। নেহরা-অশ্বিন-জাডেজা-নেগি-রায়না। সঙ্গে বোনাস বুমরাহ। এবং অবশ্যই ঘরোয়া মরসুম শেয হয়ে আসার ফলে কিছুটা স্লো-লো উইকেট। দেখবেন, বিশ্বকাপে ধোনি সিএসকে ফর্মুলাটাই কাজে লাগাবে। যেমন নেহরা-অশ্বিনকে দিয়ে বোলিং ওপেন। জাডেজা, রায়নাকে মিডল ওভারে আনা। আবার ডেথ ওভারের জন্যও নেহরা-অশ্বিন। এর পর আর ধোনির কী চাই।
অশ্বিনের মতো বুদ্ধিমান বোলার ভারতীয় ক্রিকেটে খুব একটা বেশি এসেছে বলে মনে হয় না। উইকেটের চরিত্র যে কত দ্রুত পড়ে ফেলতে পারে ও, সেটাই বুঝিয়ে দিল রবিবারের ম্যাচে। প্রথম বলটার পরেই বুঝে নেয়, উইকেটে টার্ন আছে। সেই মতো নির্দিষ্ট লাইন-লেংথে বলটা রাখল। হাওয়ায় বলটা স্লো করে দিল, ফ্লাইট দিল, টার্নও পেল। সিমটাকে ঠিকঠাক ব্যবহার করে বাউন্সও তুলে নিল উইকেট থেকে। পাওয়ার প্লে-তেও ওর মতো বিষাক্ত বোলার আর নেই। পরিসংখ্যানও বলছে, পাওয়ার প্লে-তে অশ্বিন সবচেয়ে বেশি উইকেটে নিয়েছে। টিভিতে জাডেজাকে বলতে শুনলাম শুরু থেকেই উইকেটে স্পিনাররা টার্ন পাচ্ছিল। এই রকম উইকেটে যে অশ্বিনকে রোখা সম্ভব নয়, সেটাই আবার প্রমাণ হয়ে গেল।
অশ্বিন-নজির
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সেরা ব্যক্তিগত বোলিং পারফরম্যান্স ৪-১-৮-৪।
ভাঙলেন ২০১৪-এ ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজেরই করা ৩.২-০-১১-৪ এর রেকর্ড।
শ্রীলঙ্কা সিরিজে
ক্স ৩-০-১৩-২
ক্স ৪-০-১৪-৩
ক্স ৪-১-৮-৪
ম্যাচের পরে দেখলাম, ধোনি বলছে ঘরের উইকেটে খেলা সব সময়ই সুবিধার। এই সুবিধাটা দারুণ ভাবে বিশ্বকাপে পাবে ভারত। এ দিন তো পছন্দের পিচে ১৮ ওভারের মধ্যে ১১ ওভারই স্পিনারদের দিয়ে করাল ধোনি। মজার ব্যাপার হল, ওর প্ল্যানটা যে কী হতে পারে, তা সবারই জানা। কিন্তু এই প্ল্যানের কোনও অ্যান্টিডোট বানানো কারও পক্ষে সহজ হবে না। আর বানালেও এই ফর্মে ধোনিদের কি আটকানো যাবে? কোনও বড় দুর্ঘটনা ছাড়া মনে হয় না। এতটাই ভাল ফর্মে আছে ওরা।
দু-তিনটে সিদ্ধান্ত আম্পায়াররা হয়তো এই ম্যাচে ভুল দিয়েছেন। এগুলো এখন ক্রিকেটের অঙ্গই হয়ে গিয়েছে। তবে এ দিন এই ভুলগুলো না হলেও যে শ্রীলঙ্কা বিশাল রান তুলত বা ভারত হারত এমন মনে করার কোনও কারণই নেই।
এ দিন ভারত আরও একটা টি- টোয়েন্টি সিরিজ জিতল। টি-টোয়েন্টিতে এক নম্বরে থাকল। কিন্তু তার চেয়েও বড় একটা প্রাপ্তি হল।
ধোনির অশ্বমেধের ঘোড়া কিন্তু ছুটতে শুরু করেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ৮২ (শনাকা ১৯, অশ্বিন ৪-৮, রায়না ২-৬)
ভারত ৮৪-১ (ধবন ৪৬ নআ, রাহানে ২২ নআ, চামিরা ১-১৪)