খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই মাথা ন্যাড়া করে প্রেমিক যুগলের গঁলায় জুতার মালা দেয়া হয়েছে। কথাটা শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে। শুধু তাই নয়, ওই দম্পতিকে মুখে চুন-কালি মাখিয়ে জুতার মালা গলায় ঝুলিয়ে গ্রামে ঘুরানো হয়।
গত ১৪ ফেব্র“য়ারি ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে ঘটেছে নিষ্ঠুর ও বর্বর ওই ঘটনাটি।
জানা গেছে, আট বছর আগে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন পরিমল এবং শীতলা। সন্দেশখালির আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের মাতব্বরদের চোখে এটাই চরম অপরাধ। আট বছর আগে করা সেই অপরাধের শাস্তি দেয়া হলো ২০১৬ সালের ভালোবাসা দিবসে। দীর্ঘদিন পরে বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি থানার গ্রামে ঝুপখালি ফিরেছিলেন দু’জন।
ভালবাসার মাসুল হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতি উপরে নির্বিচারে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চালানো হয় অমনবিক অত্যাচার। তাদের চুল কেটে, মাথায় চুন ও কালি মাখিয়ে, গলায় জুতোর মালা পরিয়ে তাদের করা আট বছর আগের অপরাধের সাজা দিলেন গ্রামবাসীরা।ভালবেসে ঘর বাঁধার অপরাধে শীতলার উপর নানা অত্যাচার চালান তারা। দেখা মেলেনি না পুলিশ-প্রশাসনের।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে আয়লার পরে চাষবাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শীতলার বাবা দিনমজুরের কাজ করতে তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে। একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রতিবেশী পরিমল সরদারও গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গেই। সেখানে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। সম্পর্কের কথা জানাজানি হতে মেয়ে শীতলাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন তার বাবা বিদেশ সর্দার।
শীতলা-পরিমল অবশ্য একে অপরকে ভুলতে পারেননি। সবার অমতেই তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। কয়েক দিন পরে গ্রামে ফিরে এলে তাদের নিয়ে সালিশি বসানো হয়। কিন্তু বিচারের আগেই আবার গ্রাম ছেড়ে পালান তারা।
এর পরে প্রায় ৮ বছর কেটে যাওয়ায় কিছুটা সাহস করে শনিবার রাতে নিজেদের গ্রামে ফিরে আসেন ওই দম্পতি। কিন্তু পরিস্থিতি যে একেবারেই বদলায়নি, গ্রামে ফিরতেই টের পেলেন তারা।
এবারে আর পরিমল-শীতলাকে পালানোর সুযোগ দেননি গ্রামবাসীরা। রবিবার গ্রামে তাদের আটকে রেখে বসানো হয় সালিশি সভা। অভিযোগ, গ্রামের মহিলারাই এগিয়ে এসে শাস্তি নির্ধারণ করেন। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের বিচার মেনে দু’জনকেই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়।