Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

48kখোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত হানছে’ বলে পুলিশের কথায় প্রকাশনা সংস্থার স্টল বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদ হয়েছে একুশের বইমেলায়। ব-দ্বীপ প্রকাশনের স্টল বন্ধ এবং সংস্থাটির কর্ণধারকে গ্রেপ্তারের পরদিন বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ‘লেখক-প্রকাশক-পাঠক-জনতা’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়। মুখে কালো কাপড় বেঁধে এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন।
মানববন্ধনের সময় সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ও গণজাগরণ মঞ্চের নেতা লাকী আক্তার ব-দ্বীপ প্রকাশনের মালিক শামসুজ্জোহা মানিককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনারা অভিজিতের হত্যাকারীকে ধরতে পারেন না, আপনারা খুনিদের স্ট্যাটাস পড়ে মুক্তচিন্তার মানুষকে গ্রেপ্তার করতে পারেন।”
লেখালেখি নিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মধ্যে থাকা অভিজিৎ রায় গত বছর মেলা চলার সময় টিএসসি এলাকায় খুন হয়েছিলেন। তার আগে-পরে আরও কয়েকজন একইভাবে খুন হন, লেখালেখির কারণে উগ্রবাদীরা তাদের হত্যা করে বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
এবারের বইমেলায় ব-দ্বীপ প্রকাশনের মালিক শামসুজ্জোহা মানিক সম্পাদিত সঙ্কলন গ্রন্থ ‘ইসলাম বিতর্ক’র বিরুদ্ধেও উগ্রবাদীরা ইন্টারনেটে লেখালেখিতে সরব হয়েছিল।
এরপর গত সোমবার রাতে পুলিশ মেলায় ব-দ্বীপের স্টল বন্ধ করে দেয়। তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে প্রকাশক শামসুজ্জোহা, মুদ্রাকর তসলিমউদ্দিন কাজল এবং ব-দ্বীপের বিপণন শাখার প্রধান শামসুল আলমকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ।
লাকী বলেন, “ওই বইটি একটি সংকলন মাত্র। সেখানে শামসুজ্জোহা মানিকের কোনো লেখা নেই। বইটি না পড়েই বাংলা একাডেমি আদেশ দিয়েছে বই জব্দ ও লেখককে গ্রেপ্তার করতে। শুধু এতেই তারা ক্ষান্ত হননি, শামসুজ্জোহা মানিককে ক্রিমিনালের মতো হাতে হাতকড়া পরিয়েছে, তাকে রিমান্ডে নিয়েছে।”
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে এই ছাত্রনেতা বলেন, “মুক্তমনা মানুষের কান্না, বেদনার অনুভূতি রাষ্ট্রের কানে পৌঁছায় না, তাদের কানে পৌঁছায় জামায়াত-শিবিরদের অনুভূতি। যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে, সরকার তাদের গ্রেপ্তার-নির্যাতন করে।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল ‘মানবতার মুক্তি চাই, মুক্ত চিন্তার বিকল্প নাই’, ‘মুক্তমনা লেখক হত্যার বিচার চাই’, ‘মুক্তচিন্তার সংগ্রাম চলবেই’, ‘লেখকের হাতে হাতকড়া কেন? অবরুদ্ধ মুক্তবুদ্ধি জেগে ওঠো, রুখে দাঁড়াও’, ‘বইমেলায় পুলিশি আগ্রাসন রুখে দাঁড়াও’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
ব-দ্বীপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেছিলেন, “ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পারি, ব-দ্বীপ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটিতে ইসলাম ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে।
“পরে অনুসন্ধানে বিতর্কিত লেখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বইটিতে মহানবী (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর শব্দও পাওয়া গেছে।”
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেছিলেন, “পুলিশ আমাদের বলেছে, ‘ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে- এমন বই প্রদর্শিত হচ্ছে। স্টলটি নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’ এ কারণে প্রকাশনীটির স্টল বন্ধ করা হয়েছে।”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের উদ্দেশে লাকী বলেন, “কেউ যদি বলে বই-ই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, তাহলে কি আপনি পুরো বইমেলা বন্ধ করে দেবেন?
“২০১৩ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছে, তখন কেন এর নামে মামলা করা হল না? আইনি লড়াই চলতে পারে, তবে স্টল বন্ধ ও লেখককে গ্রেপ্তার করা কখনোই সভ্যতার পরিচায়ক হতে পারে না।”
মানববন্ধনে ব্লগার বাকি বিল্লাহ বলেন, “শামসুজ্জোহা মানিক কি কাউকে খুন করেছেন? গাড়ি পুড়িয়েছেন? কাউকে হত্যার উসকানি দিয়েছেন? তাহলে তাকে কেন রিমান্ডে নেওয়া হল?”
“এরপর ওরা বলবে- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে’; আর আপনারা সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেবেন। এভাবে চলতে পারে না,” বলেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।
লেখক লাবণী মণ্ডল বলেন, “শামসুজ্জোহা মানিক একজন মুক্তিযোদ্ধা। এ দেশে যারা প্রগতিশীল, সৎ, নির্লোভ, শামসুজ্জোহা মানিক তাদের একজন। তার বয়স এখন ৬৮ চলছে, এ বয়সের তাকে রিমান্ডে নিতে পারে না রাষ্ট্র।
“সরকারের কাছে জানতে চাই, আমরা কি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হব?”
মানববন্ধনে উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সাংগঠনিক সম্পাদক সঙ্গীতা ইমামও বক্তব্য দেন।