Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

28kখোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে অরক্ষিত নলকূপের পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কতো হবে তা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করলে জানা যাবে। বৃহস্পতিবার এক রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী রেজাউল হক আকন্দের ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। এ বিষয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৫ ফেব্র“য়ারি শিশু জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন একই বেঞ্চ।
একইসঙ্গে শিশু জিহাদের মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা রেলওয়ে ও সিটি করপোরেশনের অবহেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সারাদেশে কতোগুলো অরক্ষিত পাইপ, ঢাকনাবিহীন পাইপের গর্ত ম্যানহোল ও পয়:নিস্কাশন পাইপ রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তাও জানতে চান আদালত। পাশাপাশি আগের দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস কি পরিমাণ যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে এবং ট্রেনিং করেছে তার তথ্য গত বছরের ১৫ মের মধ্যে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বাসার কাছে শাজাহানপুর রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ২৮ ডিসেম্বর জিহাদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে চিল্ড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন।
একই দিন জিহাদকে জীবিত উদ্ধারে সরকারি সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা তদন্তে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে অন্য একটি রিট আবেদন দায়ের করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাইনুল হক। রিট আবেদনে তদন্ত কমিটিতে জিহাদের মরদেহ উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবীদের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হয়। আর এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে জিহাদকে উদ্ধারে গাফিলতিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়।
জিহাদকে উদ্ধারকারী ৫ যুবককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করতেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও আগের দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কী কী আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে, তার একটি তালিকা আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়। সারাদেশে যেসব ম্যানহোলের ঢাকনা, স্যুয়ারেজ লাইন ও পানির পাম্পের মুখ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, তার একটি তালিকা দাখিল করার জন্য সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিট আবেদনে।
অন্যদিকে রিট আবেদনে জিহাদের বাবাকে ১২ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়া রাজধানীর যেসব এলাকায় ম্যানহোলের ঢাকনা নেই, সেগুলো দ্রুত স্থাপনের জন্য ডিসিসি ও ওয়াসাকে নির্দেশ দিতে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, রেলওয়ের শাজাহানপুর কলোনিতে পরিত্যক্ত পানির পাম্পের মুখ খোলা থাকার এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগেই পাইপের মুখ বন্ধ করে দিতো, তাহলে এ ধরনের নির্মম ঘটনার মুখোমুখি দেশবাসীকে পড়তে হতো না। এজন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে ওই রিট দায়ের করা হয়।