Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

29kখোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারণ, অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের কোন পরিসংখ্যানই নেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। ধারণা করে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ নাগরিকের সংখ্যা বৈধের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যেসব বিদেশি ধরা পড়েছে তাদের তথ্যমতে গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, ১০ থেকে ১২ হাজার অবৈধ বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করেছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে তারা জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
যেসব বিদেশি ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরি করে এই অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।
২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর র‌্যাব ৩১ জন অবৈধ বিদেশিকে আটক করে। আটক বিদেশির মধ্যে নাইজেরিয়ার ১২ জন, উগান্ডার পাঁচজন, ক্যামেরুনের চারজন, গাম্বিয়ার তিনজন, আইভোরি কোস্টের দুজন, কেনিয়া, টোগো, মালি, মোজাম্বিক ও সেনেগালের একজন করে নাগরিক রয়েছেন। গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা রামপুরা, গুলশান ও উত্তরার ১৪৭টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তাঁরা একযুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র দু’জনের মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ব্যাংকের এটিএম বুথে কার্ড জালিয়াতি সঙ্গে বিদেশিদের জড়িত সন্দেহ করেছে পুলিশ। ব্যাংকের এটিএম বুথে কার্ড জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ৪ থেকে ৫ জন বিদেশি নাগরিক পুলিশি নজরজারিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান।
রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে মফিজুল ইসলাম (৫০) নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এক মার্কিন নাগরিক অপহৃত হয়েছেন। এই ঘটনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার তার গাড়িচালক ইমরান আলী বাদী হয়ে কাফরুল থানায় মামলা করেছেন। তবে অপহরণের এখনো তাকে উদ্ধার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার কাইয়ুমুজ্জামান বলেন, অপহরণের অভিযোগে প্রথমে মঙ্গলবার একটি জিডি এবং পরে বুধবার মামলা করা হয়। পুলিশ তদন্ত করছে। ব্যক্তিগত কোন বিরোধের কারণে এই অপহরণ কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের উদ্ধারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে।
২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র জুবায়ের আহমেদকে (১৭)হত্যা করা হয়। পরে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠসংলগ্ন পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত জুবায়েরের মা দিলারা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় আলজেরিয়ান নাগরিক আবু ওবায়েদ কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আলজেরিয়ান নাগরিক আবু ওবায়েদ কাদেরকে (৪৬) রিমান্ডে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, কাদের অবৈধভাবে বসবাসের পাশাপাশি আরো নানা অপরাধে যুক্ত। তার মতো আরো প্রায় ১০ হাজার বিদেশি মাদক ব্যবসা, জাল ডলার তৈরি, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, হুন্ডি ব্যবসা, চোরাচালান, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতাসহ নানা অপরাধে যুক্ত; যাদের মধ্যে আফ্রিকার নাগরিকই রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। এর আগে উত্তরা থেকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছিল অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় যুক্ত চীন ও তাইওয়ানের ৩৭ নাগরিককে।
ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকান্ডের পর বিদেশিদের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ নেয় সরকার। বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতে গিয়েই বেঁধেছে বিপত্তি। বৈধভাবে অবস্থানকারীদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা ও কর্মস্থল সরকারের কাছে থাকলেও অবৈধভাবে যারা আছেন তাদের কোন তথ্যই নেই। ফলে তাদের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে।
পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক হিসাবে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে বৈধভাবে বসবাসকারী সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন। আর অবৈধ বিদেশির সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যেমন- নাইজেরিয়া, উগান্ডা, ঘানা, আলজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সেনেগাল, ক্যামেরুন ও লাইবেরিয়া থেকে আসা অবৈধ নাগরিকদের অনেকে প্রায়ই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।
গত তিন বছরে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৪ জন আফ্রিকান নাগরিককে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া গত ৫ বছরে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অভিযোগে ৯১ আফ্রিকান নাগরিককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সব মিলিয়ে এই ৫ বছরে গ্রেফতার হওয়া বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা দেড় শতাধিকের মতো। এদের অধিকাংশই খেলোয়াড় ও স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসেছিলেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা দেশে ফিরে যাননি।
পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, নাইজেরিয়া, লিবিয়াসহ ১৬টি দেশের সহস্রাধিক নাগরিকের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক নানা তথ্য রয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক নাগরিক অনবরত এদেশে প্রবেশ করছে। তাদের একটি বড় অংশই মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, অবৈধভাবে বাংলাদেশে বাস করা বিদেশি নাগরিকদের বড় একটি অংশ আফ্রিকার নাগরিক। তারা এখানে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যেই পুলিশের অভিযানে তারা গ্রেফতার হচ্ছে। জাল টাকা, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা থেকে শুরু করে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধেও তারা জড়াচ্ছে। তাদের ব্যাপারে সচেতন গোয়েন্দা পুলিশ।