Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

34kখোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের সুনাম সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে কোনো রকম অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে (ডিএসসিএসসি) ২০১৫-১৬ কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে এই অনুষ্ঠানে তিনি গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন। খবর বাসসের
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষুণœ হয়, এমন কোনো অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ড আমরা বরদাশত করব না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম অক্ষুণœ থাকবে। যে যেখানেই নিয়োজিত থাকুন না কেন, নিজেদের দায়িত্ব মর্যাদার সঙ্গে পালন করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত সদস্যদের সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কোনোভাবেই সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া হবে না।’ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও অনেক সুনাম কুড়িয়েছে; যা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করছে। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি কর্মরত দেশগুলোতে গণতন্ত্রের বিকাশ, আর্থসামাজিক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে ব্যাপক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেছেন, এই কার্যক্রমে বাংলাদেশ নেতৃত্বের স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। তিনি বলেন, বিশ্বে মোট শান্তিরক্ষীর ১০ জনের একজন বাংলাদেশের।
সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান।
স্টাফ কলেজটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সামরিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অনন্য এক প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী কলেজের কমান্ড্যান্ট, অনুষদ সদস্য, অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণে সরকার ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্টাফ কলেজের বহুতল একাডেমিক ভবনসহ আরও কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।
এ বছর মোট ১১ জন নারী অফিসার এই কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিবছর মহিলা অফিসারদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ বর্তমান সরকারের ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ নীতির সাফল্যের আরেকটি স্বাক্ষর।’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারী সৈনিকদের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে—উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকারই প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়। গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের স্ত্রীরা প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গঠনমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের প্রশংসা করেন।
২০১৫-১৬ বর্ষে ডিএসসিএসসি থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫৮ জন, নৌবাহিনীর ২৩ জন এবং বিমানবাহিনীর ২০ জনসহ মোট ৬৮ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া ব্রাজিল, চীন, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিয়েরালিওন, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তানজানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র ও জাম্বিয়ার ৬৭ জন কর্মকর্তা এ বছর এই কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
ডিএসসিএসসির কমান্ডডেন্ট মেজর জেনারেল সাজ্জাদুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, জ্যেষ্ঠ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।