Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

33kখোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার হয়ে বাংলাদেশ-মিয়ামনমার সীমান্তবর্তী উখিয়ার ঘুমধুম পর্যন্ত ‘বন্ধ থাকা’ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে ‘শর্তসাপেক্ষে’ দেড়শ কোটি ডলার ঋণ দিতে আগ্রহী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের আওতায় প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে এই অর্থ দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে ঋণদাতা সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়ার ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার পথ ট্রেনে যাওয়া যাবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এডিবি শাখার যুগ্ম সচিব সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, “এডিবির মিশনের সঙ্গে প্রকল্পটির ঋণের বিষয়ে সম্প্রতি দুটি মিশন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে এডিবি ২ শতাংশ সুদে ১৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে।”
এই কর্মকর্তা জানান, শিগগিরই ম্যানিলায় এডিবির বোর্ড সভায় এ ঋণ প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে। বোর্ডের অনুমোদন পেলে এডিবি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করবে।
“এডিবি আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের আওতায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। দাতা সংস্থাটি তাই এ প্রকল্পে এই বিপুল অর্থ দিতে আগ্রহী বলে আমি মনে করি।”
তবে এ প্রকল্পের বিষয়ে এডিবির কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এডিবির শর্তে বলা হয়েছে, এই রেলপথ মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়ালগেজে হতে হবে। যেসব পাহাড়ি এলাকায় হাতি চলাচল করে, সেখানে আন্ডারপাস করে নির্বিঘেœ হাতি চলাচলের সুযোগ রাখতে হবে।
২০১০ সালে সরকারের অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পে কোনো দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ না পাওয়ায় বাস্তবায়ন কাজ থমকে আছে।
অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী এ প্রকল্পের অধীনে ১২৮ কিলোমিটার সিঙ্গেল ট্র্যাক ও মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণের কথা ছিল। এখন সেই নকশা পরিবর্তন করে মিটাগেজের পরিবর্তে ডুয়ালগেজ করার জন্য সংশোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
মূল প্রকল্পে ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় হতে পারে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার মধ্যে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা (১৫০ কোটি ডলার) দিতে চায় এডিবি। আর কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ২০২০ সালে।
প্রকল্প সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রকল্পটি যুগোপযোগী করে বাস্তবায়নের জন্যই সংশোধন করা হচ্ছে।
“এর ফলে প্রকল্পটির জন্য আগের প্রায় দ্বিগুণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়ালগেজ করতেও ব্যয় বাড়বে। এসব কারণে ব্যয় এতো বাড়ছে।”
প্রকল্পটির জন্য ৬৯০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে বলেও তিনি জানান।
এডিবির শর্ত প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, “এডিবি অর্থায়নের আগে একটি শর্ত দিয়েছে। সেটি হচ্ছে, কক্সবাজারের যে পাহাড়ি এলাকার ওপর দিয়ে রেললাইন যাচ্ছে সেখানে হাতি চলাচল রয়েছে। কোনো হাতি যাতে রেললাইনে কাটা না পড়ে সেজন্য হাতির অবাধ চলাচলের রাস্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
ওই শর্ত অনুযায়ী হাতি চলাচলের রাস্তায় লোহার শক্ত বেড়া দিয়ে রেললাইনের নিচ দিয়ে আন্ডারপাস তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।
নজরুল বলেন, সম্প্রতি এ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় অনুমোদন পেলেও এখন এডিবির শর্ত অনুযায়ী সংশোধন করে তা আবারও পিইসি সভায় তুলতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপন এবং ২৬ কিলোমিটার লুপলাইন স্থাপন করা হবে।
সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, দুলাহাজরা, রামু, ঈদগাহ, কক্সবাজার, উখিয়ায় মোট নয়টি নতুন স্টেশন হবে। রেলপথে হবে ৪৭টি ব্রিজ, ১৪৯টি কংক্রিট বক্স কালভার্ট ও ৫২টি কংক্রিট পাইপ কালভার্ট।
ট্র্যান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের আওতায় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও কোরিয়া হয়ে ইউরোপে পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এ রেলপথ।
এই রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনে ভারতেরই আগ্রহ বেশি। দেশটি মিয়ানমারের সঙ্গে ট্রান্স এশিয়ান রেললাইন স্থাপনের কাজও শুরু করেছে। দুই দেশ ৩৪৬ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে মিয়ানমারের কালাই ও ভারতের জিরিবামের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে।