খোলা বাজার২৪, রবিবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ : একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীদের হাতাহাতির ঘটনায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের দায়ী করেছে বিএনপি।
রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগের রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ‘বার বার বাধা’ দেওয়া হয়েছে। তার গুলশানের বাসার সামনেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে।
“সব বাধা অতিক্রম করে চেয়ারপারসনের গাড়ি বহর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছাকাছি এলে পুলিশ দুই জায়গায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে এবং অপেক্ষামাণ নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এ ঘটনায় ৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মী মারাত্মকভাবে আহত হন।”
“আমরা চেয়ারপারসনের গাড়িবহরকে বার বার বাধা প্রদান ও নেতা-কর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই,” বলেন রিজভী।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রাত ১টা ২৫ মিনিটে খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে পৌঁছালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আারেফিন সিদ্দিকসহ কয়েকজন শিক্ষক তাকে এগিয়ে আনতে যান। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাক্কায় ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান পড়ে যান।
পরে খালেদা জিয়ার সঙ্গের নেতাকর্মীরা শহীদ বেদীতে উঠতে গেলে সেখানে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরা বাধা দেন। তখন নেতাকর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় রোভার স্কাউটের সদস্য মো. তানসির রাব্বি (বাঁধন), রিয়াজ ও জুবায়েরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
বিএনপি কর্মীরা জুতা পায়েই শহীদ বেদীতে ওঠে বলে জানান রোভার স্কাউট জুবায়ের। টেলিভিশনের ভিডিওতে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে স্যান্ডেল হাতে মারপিটে উদ্যত হতেও দেখা যায়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিজভী বলেন, “এটা ঠিক নয়। আমরা নিজেরা একুশের প্রথম প্রহরে সেখানে অবস্থান গ্রহণ করে নিজেরা দায়িত্ব পালন করেছি। আমার পায়ে যথেষ্ট সমস্যা আছে, রড লাগানো আছে। তারপরও খালি পায়ে শহীদ মিনারের যে মর্যাদা তা অক্ষুণœ রাখতে অবস্থান গ্রহণ করেছি। আমরা সেখানে কাউকে জুতা পায়ে আসতে দেখিনি।”
টেলিভিশনের ওই খবর ‘বানোয়াট ও অসত্য’ দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন,
সরকারের ‘অনুগ্রহভাজন ও প্রিয়ভাজন’ সংবাদমাধ্যম মলিকরা বিএনপির ভাবমূর্তিকে ‘কালিমালিপ্ত’ করার চেষ্টায় আছে।
খালেদা জিয়ার ফুল দেওয়ার সময় জুতা পায়ে তাহলে কারা উঠেছিল- এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, “কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের অঙ্গসংগঠনগুলো। তারা ছাড়া আর কেউ করতে পারে না।”
অনেক ভাষা সৈনিক ‘জাতীয়তাবাদী দল করেন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, কেবল আওয়ামী লীগেরই ভাষা আন্দোলন নিয়ে শ্রদ্ধাবোধ আছে, বিএনপির নেই- এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র কেনা ও জমাদানে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, “সাতক্ষীরায় কলারোয়া উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীদের প্রবলভাবে বাধা প্রদান করছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাদের একটা গ্রুপ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছে। নির্বাচনের অফিসকে একেবারে তারা বাড়ি-ঘর করে ফেলেছে। আমাদের চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল ইসলামসহ দুইজনের মনোনয়নপত্র তারা জমা দেওয়ার সময় ছিঁড়ে ফেলেছে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বাগেরহাটের বিভিন্ন ইউনিয়নেরও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, বিএনপির প্রার্থীরা যেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারেন, সেজন্যই ‘এসব করা হচ্ছে’।
“পুলিশ বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গ্রেপ্তারের জন্য হানা দিচ্ছে। তাদের বাড়ি-ঘর সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর করছে। অনেক প্রার্থী প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়া, পরিবার ছাড়া।”
অন্যদের মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আবদুল লতিফ জনি, হেলেন জেরিন খান ও শাম্মী আখতার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।