খোলা বাজার২৪, রবিবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ : একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়ার পথে বারবার পুলিশী বাধার মুখে পড়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অর্ধ-শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়।
ছাত্রদল ও যুবদলের সহায়তায় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও নির্ধারিত সময়ে শহীদ মিনারে পৌঁছাতে পারেননি বেগম জিয়া।শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের। কিন্তু পুলিশী বাধায় শেষ পর্যন্ত রাত ১টা ৩০ মিনিটে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান তিনি।
এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান,চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান,অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী,সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ্ উপস্থিত ছিলেন।
বায়ান্নর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের শহীদ মিনারে যাতায়াত নির্বিঘœ করতে দলের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার ডিএমপি ও র্যাবের ডিজিসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়।
বেগম খালেদা জিয়া শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় গাড়ি বহরে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর (সিএসএফ) গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স ও দুইটি পরিবহনসহ ৮ থেকে ১০টি গাড়ি ছিল।
এদিকে, খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে মৎস্যভবন থেকে হাইকোর্ট মাজার (শিক্ষাভবন সংলগ্ন চার রাস্তার মোড়) পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ইউনিট,যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা অবস্থান নেয়। তাদের সংখ্যা দেড় হাজারের মতো ছিল।
খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরটি মহাখালী ফ্লাইওভার-ফার্মগেইট-বাংলামটর হয়ে এক পর্যায়ে মৎস্যভবনের সামনে পৌঁছায়। তখন সেখানে অবস্থানরত নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে বেগম জিয়ার গাড়িবহরকে নিয়ে শহীদ মিনারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এ সময় গাড়ি বহরটি খুব ধীর গতিতে চলতে থাকে। গাড়ি বহরটি রাত পৌনে ১টার দিকে হাইকোর্ট মাজারের সামনে পৌঁছালে সেটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।সেখানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মিরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে।তখন ছাত্রদলের নেতা-কর্মিরা ফের উত্তেজিত হয়ে ব্যারিকেড ভেঙ্গে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটিসহ দুইটি গাড়ি নিয়ে দোয়েল চত্বর অভিমুখে অগ্রসর হয়।
তবে এ সময় বহরের অন্যগাড়িগুলোর পাশাপাশি ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীকে সেখানে আটকে দেয় পুলিশ।এরপর দোয়েল চত্বরের দিক থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা সেখানে আসেন এবং তাদের হস্তক্ষেপে পুলিশ বহরের বাকি গাড়িগুলোকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়।
রাত ১টা ৫ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর দোয়েল চত্বরে পৌঁছালে ফের পুলিশী বাধার মুখে পড়ে। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে পুরো দোয়েল চত্বর এলাকা মুখরিত করে তোলেন তারা।এক পর্যায়ে পুলিশ খালেদা জিয়ার গাড়ি ও সিএসএফ’র একটি গাড়িকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার অনুমতি দেয়। তখন ওই দুটি গাড়ির সঙ্গে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও ভেতরে ঢুকে পড়লে পুলিশ মারমুখি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়।তবে পুলিশের লাঠিচার্জের কারণে চার রোভার সদস্য গুরুতর আহত হয় বলে জানা যায়।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মিদের আহতের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন কে বলেন, পুলিশের লাঠিচার্জে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম টিটু, যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজসহ অর্ধ-শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। কিন্তু এরপরেও সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা শেষ পর্যন্ত দেশনেত্রীর গাড়িবহরের সঙ্গে ছিল।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ কে বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে বাধা দিয়েছে, হামলা চালিয়েছে। কিন্তুর তারপরেও দৃঢ মনোবল ও অনমনীয় সিদ্ধান্তের কারণে পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে দেশনেত্রী শেষ পর্যন্ত বায়ান্নর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তবে পুলিশী বাধায় তিনি নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, দেশনেত্রীর গাড়ি বহরে থাকা দলের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ অন্যায়ভাবে বেধড়ক মারধর করে । এতে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অর্ধ-শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়। দলের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।