খোলা বাজার২৪,সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: পঞ্চগড় জেলাধীন দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে সন্তগৌড়ীয় মঠের প্রধান পুরোহিত ও অধ্যক্ষ জগেশ্বর রায়কে রোববার সকালে গলা কেটে হত্যা এবং উক্ত মঠের অন্যান্য পুজারীদেরকে গুলি ও ককটেলের আঘাতে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা চাপাতি, গুলি ও ককটেল ব্যবহার করে এই পৈশাচিক ঘটনা ঘটিয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কাপুরোষোচিত ও মানবতাবিরোধী ঘৃন্য কাজ বলে অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আজ এক বিবৃতিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিববলেন, বর্তমান সময়ের সবচাইতে লোমহর্ষক ঘটনা ঘটানো হয়েছে পঞ্চগড়ে পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যা করার মাধ্যমে। যারা এই জঘন্য নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মানবতার শত্রু। পশু শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এরা অন্ধকারে বিচরণ করে। এদের কাছে সম্প্রীতি, সহানুভুতি ও সহমর্মিতার মানবীয় কোন গুণাবলীই নেই। মির্জা আলমগীর বলেন, গহীন অন্ধকারের দিকে দেশকে ঠেলে দেয়াই হচ্ছে এদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। বর্তমানে অপশাসনের এক ভয়াল নৈরাজ্যের মধ্যে দেশবাসী দু:সময় অতিক্রম করছে। একদিকে যেমন মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই অন্যদিকে মানুষের বাক-ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর জন্য বিরোধী দলের রাজনৈতিক অধিকার এখন অবলুপ্ত। মানুষের ভোটাধিকারকে সম্পূণরুপে অপহরণ করা হয়েছে। কারন ভোটারবিহীন সরকার জনগণ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের অধিকার হরণ ও তাদেরকে দলন-পীড়নে ব্যস্ত থাকার জন্যই দেশের ভয়ঙ্কর গণবিরোধী চরমপন্থী শক্তিগুলো কোথায় আস্তানা গাড়ছে তা চিহ্নিত করতে পারছে না। বরং সরকার উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপকৌশল নিয়ে বিরোধী দলের ওপর তা চাপানোর অপচেষ্টা করেছে বারবার। ইতোপূর্বে বিদেশী নাগরিকদের হত্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ব্লগার, প্রকাশক হত্যাকান্ডসহ কোন হত্যাকান্ডেরই এখন পর্যন্ত সুরাহা করতে পারেনি সরকার। সুতরাং ঘাতক অন্ধশক্তি তাদের ডালপালা বিস্তার করে একের পর এক প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এবং গুরুতর জখম করছে। অথচ জঙ্গী তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইপ ইন্টিলেজেন্স গ্রুপ বারবার যারা দায় স্বীকার করেছে তাদের বার্তার কথা উল্লেখ করলেও সরকার এই খবরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সুতরাং ইতালীয় নাগরিক তাভেলা থেকে শুরু হওয়া গতকাল পঞ্চগড় পর্যন্ত যত খুন জখম ঘটেছে তাতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে জনমনে এক বিশাল প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আসলে এই রক্তাক্ত দুস্কর্মের পেছনে নেপথ্য শক্তি কারা ? আবহমানকাল ধরে এদেশের মানুষ অতিথিবৎসল, এদেশের মানুষের কোন অংশই কোন বিদেশী নাগরিককে হত্যা করতে পারে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক উজ্জল ঐতিহ্য। যুগযুগ ধরে বাংলাদেশের লোক-সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পারিক শুভেচ্ছাবোধ আমাদের এক গৌরবদীপ্ত ঐতিহ্য, সুদীর্ঘকাল ধরে মানুষে মানুষে মিলনের বাণী আমাদের লোকসাহিত্যে বিধৃত হয়েছে। কোন ধর্মগুরুকে হত্যার মতো ঘৃন্য অপকর্ম বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন নজীর নেই। ভয়ঙ্কর কোন কুচক্রী গোষ্ঠীর মদদেই হাতে গোনা নির্বিবেক কান্ডজ্ঞানহীন বিপথগামীরাই এই নৃশংস দুস্কর্মগুলি সংঘটিত করছে। সরকার এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দূর্বৃত্তদের কর্তৃক নিহত পুরোহিত জগেশ্বর রায়ের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। তিনি মঠের আহত পুজারীদের সুস্থতা কামনা করেন।