Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

4kখোলা বাজার২৪ মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: জনবল সঙ্কটের কারণে প্রথম দফা ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র নেওয়া ব্যক্তিরা নির্বাচনী বিধিমালা ঠিকমতো মানছে কি না তা তদারক করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি নির্বাচনী ব্যয় তদারকি নিয়েও বেকায়দায় রয়েছে সংস্থাটি।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য এবার ইউপিতে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা রয়েছে। বিধি লঙ্ঘন করা রাজনৈতিক দলকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার সুযোগ রয়েছে।
নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী এবার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ৫ লাখ টাকা এবং সদস্য প্রার্থীরা ১ লাখ টাকা করে ব্যয় করতে পারবেন। এর বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে আরও ৫০ হাজার টাকা এবং সদস্যদের ১০ হাজার টাকা খরচ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি ইউপিতে ৩০ হাজার টাকা করে ব্যয় করতে পারবে। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সদস্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এ বিধান নেই।
আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭৩৯টি ইউপিতে ভোট করতে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে সোমবার।
এরপর ২৩ ও ২৪ ফেব্র“য়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই হবে; প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২ মার্চ। তারপরই আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন ‘বৈধ’ প্রার্থীরা।
এর আগে আগাম প্রচারের সব পোস্টার ও প্রচার সামগ্রী ১৪ ফেব্র“য়ারির মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল ইসি। সে নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পরেননি ইসির কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে ‘অভিযোগ না পাওয়া’ ও জনবল সঙ্কেটের কথা বলেছেন তারা।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, “আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রার্থী হওয়ার পর সবার দিকে সমান নজর রাখা হবে। এখনো পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি।” তিনি বলেন, এখন কোনো অভিযোগ পেলে ছবি তুলে রাখা হবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রার্থী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল কম থাকায় এখন এ বিষয়ে কিছু করা না গেলেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তারা বিষয়টি দেখবেন।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, “নির্বাচনী ব্যয় তদারকি করা কঠিন হলেও উপজেলা পর্যায়ে ভিজিলেন্স টিম থাকবে; বিচারিক ও নির্বাহী হাকিম থাকবে। প্রার্থীর খরচ ব্যয়সীমার মধ্যে থাকছে কি না এবং আচরণবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কি না- তা ভালোভাবে দেখা হবে।”
অবশ্য প্রতি উপজেলায় মাত্র দুইজন করে হাকিম দিয়ে এতবড় কাজ কতোটা সম্ভব- সে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন কয়েকজন।
একজন কর্মকর্তা বলেন, উপজেলাপ্রতি ৬ থেকে ৯টি ইউনিয়ন আছে। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান কাউন্সিলরসহ গড়ে ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে; পদগুলোতে গড়ে পাঁচজন করে প্রার্থী হলেও প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে পাঁচশ প্রার্থীর দিকে নজর দিতে হবে।
“এ অবস্থায় নির্বাচনী ব্যয় সীমার মধ্যে থাকছে কিনা বা আচরণবিধি সঠিকভাবে পালন হচ্ছে কিনা তা কয়েকজন কর্মকর্তার পক্ষে তদারকি করা কঠিন হবে”, বলেন তিনি।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, সংসদ নির্বাচনের ব্যয় তদারকিই যেখানে কঠিন, সেখানে ইউপিতে তা ‘একপ্রকার অসম্ভব’।
“এক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী কাউকে পেলে শাস্তি ও জরিমানা দিয়ে অন্যদের বিধি লঙ্ঘন রোধে বিষয়টি নজরে আনার চেষ্টা করা হবে।”
এবার সারাদেশে ছয় ধাপে ইউপি ভোট হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৬৮৪ ইউপিতে ২ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে, ভোট হবে ৩১ মার্চ।
এর পরে ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, ৭ মে ৭২৮টি, ২৮ মে ৭১৪টি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হবে।
আছে সমন্বয়হীনতাও
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, মনোনয়নপত্র ও ইউনিয়নভিত্তিক ভোটারের সিডি দিতে দেরি হওয়াসহ নানা ক্ষেত্রে ইসির সমন্বয়হীনতায় নির্বাচন আয়োজনে ব্যাঘাত ঘটছে। মনোনয়নপত্র সময়মতো ‘না পাঠানোর পাশাপাশি’ ভোটার তালিকার সিডি নিয়ে কমিশনের দুটি পাল্টাপাল্টি নির্দেশনায় ‘সমন্বয়হীনতার’ এ চিত্র আরও স্পষ্ট হয়েছে।
মাঠ কর্মকর্তার জানান, তফসিল ঘোষণার পর গত ১৬ ফেব্র“য়ারি ইসির সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান ভোটার তালিকার সিডি নিয়ে প্রথম একটি নির্দেশনা দেন।
ওই নির্দেশনায় ইউনিয়ন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এলাকাভিত্তিক ‘ছবি ছাড়া ভোটার তালিকা’র ইলেকট্রনিক কপি ৫০০ টাকার বিনিময়ে সরবরাহের কথা বলা হয়।
কিন্তু পরে এনআইডি উইং ভোটার তালিকার সিডি সরবরাহ না করতে নির্দেশ দেয়।
এনআইডি উইং-এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের ওই নির্দেশনায় ভোটার তালিকার সিডি ও পিডিএফ যাচাই শেষে প্রার্থীদের কাছে সরবরাহ করতে বলা হয়।
‘সমন্বয়হীনতা’র বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন ইসির উপ সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তাও।
তিনি জানান, তাড়াহুড়ো করে তফসিল দিতে গিয়ে কিছু ‘ত্রুটিবিচ্যুতি’ ঘটেছে।
“এখন তা সারিয়ে উঠা গেছে। প্রথম কয়েকদিন ভুলসহ সিডি ও মনোনয়নপত্র বিতরণ হলেও পরে প্রার্থীদের কাছ থেকে সেগুলো ফেরত নেওয়া হয়েছে।”
ইউপির দ্বিতীয় পর্ব থেকে প্রয়োজনী কাগজপত্র ও নির্বাচনী সামগ্রী সময় মতো নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।