খোলা বাজার২৪ বুধবার,২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬:আজ দুপুরে এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,আগামী ৭৩৯ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২ মার্চ। কলঙ্কিত প্রহসনের ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এর একতরফা নির্বাচনের যে মডেল খাড়া করেছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার এবং তার দোসর নির্বাচন কমিশন পরবর্তীতে তারা প্রতিটি নির্বাচনে সেই মডেলটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে অনুসরণ করে যাচ্ছে। এই ইউপি নির্বাচনেও যে ভোট ডাকাতিসহ আওয়ামী লীগ ক্যাডার ও পুলিশের যৌথ তান্ডব দৃশ্যমান হবে তার সকল আলামত শুরু হয়ে গেছে এখন থেকেই। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র দাখিলে বাধা, বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ীঘর ও চলাচলের ওপর উপুর্যপুরী হামলা এবং চেয়ারম্যান প্রার্থীদেরকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের প্রাণবিনাশী হুমকি অব্যাহতভাবে চলছে। পটুয়াখালী জেলাধীন বাউফল উপজেলা’র ধুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল জব্বার মৃধার সমর্থকদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে প্রায় পঞ্চাশ জনকে আহত করেছে। এদের মধ্যে ৮ জনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এছাড়া সন্ত্রাসীরা বিএনপি প্রার্থী’র সমর্থকদের দুইটি মটরসাইকেল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নে সংঘটিত গতকালকের সন্ত্রাসী ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
গতকাল বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার খানপুর ইউপি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আবিদুর রহমানের চেয়ারম্যান প্রার্থীতা সমর্থনকারী ও ইউনিয়ন বিএনপি’র সদস্য সরোয়ারকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জোর করে ধরে এনে বলতে বাধ্য করায় যে, আবিদুর রহমানের চেয়ারম্যান প্রার্থীতার সমর্থন পত্রে তিনি স্বাক্ষর করেন নি। এইভাবে দেশব্যাপী যেসব স্থানে ইউপি নির্বাচন হচ্ছে সেখানে জোর করে বিএনপি প্রার্থীদের প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীদের প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে গিয়ে সমর্থন পত্রে স্বাক্ষর করেনি মর্মে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে।
এছাড়া ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে দিচ্ছেনা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তারা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় ঘিরে রেখে বিএনপি প্রার্থীদেরকে মারধর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে।
নিবাচনকালীন সময়ে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বেই থাকে, কিন্তু তারপরও প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় কী করে লীগ ক্যাডাররা নির্বাচনকে ঘিরে বাধা সৃষ্টি ও তান্ডব চালাতে পারে ? নির্বাচন কমিশণ কী স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা নাকি গণভবন বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা সুধা সদনের এক্সটেনশন ভবন ? সরকার ও সরকারী দলের বাধার কারনেই বিএনপি মনোনীত ৮৩ জন প্রার্থীরা নোমিনেশন পেপার জমা দিতে পারেনি। কেবলমাত্র বাগেরহাট জেলাতেই ৩০ জন বিএনপি’র ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি। এছাড়া আরো ৪/৫ জনকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো তার জন্য দায়ী নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের কারনেই জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নাই। জনগণের ভোট প্রদানের অধিকার বিলুপ্ত করে সরকারের একচেটিয়াত্ব প্রতিষ্ঠার সহযোগী হিসেবে নির্বাচন কমিশন ।ভূমিকা পালন করছে। আর এই কারনেই গণতন্ত্রে যে সামাজিক-রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরী হয় সেটি বিনষ্ট হওয়ায় এক কঠোর কর্তৃত্ববাদী দু:শাসনের বিষাক্ত ছোবল দেশবাসীকে সহ্য করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন,একটি সমাজে যদি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো অপরাধ বিস্তারলাভ করে তবে বুঝতে হবে সমাজ পঙ্গু হয়ে গেছে। সমাজ তখনই পঙ্গু হয় যখন রাষ্ট্র ও সমাজ করতলগত হয় একধরনের লুটেরা অপরাধী গোষ্ঠীর। আর তখনই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ পূণ:পূণ: ঘটতে থাকে। রাষ্ট্র যদি বেআইনী অস্ত্র রাজনৈতিক স্বার্থে সমাজবিরোধীদের হাতে তুলে দেয় অথবা বৈধ অস্ত্র আইনের লোকেরা ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্মূল করতে ব্যবহার করে তবে সমাজে আইন মান্যকারী নাগরিকের চেয়ে আততায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
একজন অপরাধীর তার অপরাধকর্মের লক্ষ্য থাকে খুন, জখমের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার, লুটপাট, দখল, মুক্তিপণ আদায়। আর পূর্বে অপরাধীদের দ্বারা অপরাধের শিকার হতো প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া, যুুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীর। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশু-কিশোর’রা কিছুটা রেহাই পেতো। কিন্তু এখন অপরাধে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে হৃদয়বিদারক শিশু হত্যা। বেশ কিছুদিন ধরে নিজেদের অন্ধ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে অপরাধীরা যেন বেছে নিয়েছে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের। হবিগঞ্জের বাহুবলে পঞ্চায়েতের দ্বন্দ্বের কারনে চার শিশুকে হত্যা করে বালিচাপা দিয়ে রেখেছিল খুনীরা। গত শুক্রবার ভাষানটেকের ধামালকোট বস্তিতে শিশু ফাহিমের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ তাকে হত্যা করা হয়েছে। বরিশালের আগৈলঝরায় পাওনা টাকা না দেয়ায় ১২ বছরের এক শিশুকে হত্যা করে লাশ ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। কয়েক মাস আগে গাইবান্ধার ক্ষমতাসীন দলের এমপি গাড়ী থেকে নেমে একটি শিশুকে গুলি করে। এইভাবে বলতে গেলে শিশু হত্যার তালিকা শেষ হবেনা। গত ১২ মাসে ৩৮০ জনের বেশী শিশু নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। রাষ্ট্রের পরিচালকদের যদি জবাবদিহিতাহীন অবৈধ স্বত্ত্বা থাকে, তারা যদি ক্রমাগতভাবে সমাজে হিংসা-কলহের বিষাক্ত বাষ্প নির্গত করতে থাকে, অসহিঞ্চুতা যদি তাদের রাজনৈতিক আচরণ হয়, তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে তারা বারুদ, বন্দুক, লাঠি, চাপাতি ব্যবহার করতেই থাকেন, দেশে জনগণের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তারা যদি দলীয় লোকদের বেআইনী আচরণ করতে উৎসাহিত করেন তাহলে কাব্য কথায় দেশের লজ্জা চাপা পড়ে থাকবে না।
গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কারনেই আজ সমাজ ও রাষ্ট্রের মানবিক চেহারা লোপ পাচ্ছে। তাই নিষ্পাপ শিশুরাও এই দু:শাসনের করাল গ্রাসে চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এইভাবে ভোটারবিহীন সরকার আমাদের সমাজকে অনৈতিকতা আর অধ:পতনের লাষ্ট চ্যাপ্টারে পৌঁছিয়ে দিয়েছে। এই দেশকে শান্তি, সুস্থিতি ও স্বস্তি দিতে হলে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। একমাত্র সমাজ ও রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলেও অপরাধীদের দৌরাত্ম কমবে। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকলে নানাধরণের অপরাধসহ অবৈধ অপকর্মের প্রকোপ উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
তিনি বলেন,আগামী ১৯ মার্চ ২০১৬ শনিবার বিএনপি’র জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল ২০১৬ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গঠিত উপ-কমিটিগুলো পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। প্রচার ও ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটি, শৃঙ্খলা ও সেবা উপ-কমিটি, ড্রাফটিং উপ-কমিটি, প্রকাশন উপ-কমিটি ইতোমধ্যে সভা করে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। ঢাকা মহানগরীতে প্রচার-প্রচারণার জন্য সড়ক-মহাসড়কের বিভাজক, লাইটপোষ্ট ও সড়কদ্বীপে ফেস্টুন টাঙ্গানোর জন্য অনুমতি পেতে সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রদের বরাবর আবেদন করা হয়েছে।