Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

7kখোলা বাজার২৪ বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: গত বছর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্তত ৫৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ১৭ জন জয়ী হন। এ সময় অন্তত ২০ জন সাংসদ ও প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের ম“ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। বিদ্রোহী প্রার্থী ও ম“দাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিলেও কেবল কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার মধ্যেই শাস্তি সীমাবদ্ধ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মতে, পৌর নির্বাচনে দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মতে, পৌর নির্বাচনে শাস্তি না হওয়ায় ইউপি নির্বাচনে একক প্রার্থী করা কঠিন হবে।
২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭২৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে এসব ইউপির জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় ইউপির মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২ মার্চ। ইউপির নির্বাচনে দলের কতজন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন, এর সঠিক হিসাব আওয়ামী লীগের কাছে নেই। তবে দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক মনে করছেন, প্রথম ধাপের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ইউপিতে আওয়ামী লীগের নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, কুমিল্লার দেবীদ্বার, ময়মনসিংহের ফুলপুর, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের অন্তত ১৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, দল অনেক সময় জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় না। বড় নেতারা তাঁদের পছন্দমতো প্রার্থী দেন। এ কারণে তাঁরা প্রার্থী হয়েছেন। শাস্তি হলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, পৌরতে এখনো শাস্তি হয়নি। দলের জন্য কর্মী লাগে। পৌরতে না হওয়ায় ইউনিয়নেও শাস্তি দেওয়ার সম্ভাবনা কম। অবশ্য তাঁরা স্বীকার করেন, শাস্তির ব্যাপারে দলের অবস্থান দৃঢ় হলে জয়ের সম্ভাবনা কম—এমন অনেক নেতা ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হতেন না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিদ্রোহ দমন করা পুরোপুরি সম্ভব হবে না। তবে যতভাবে চেষ্টা করা যায়, সেটা করা হবে। তিনি বলেন, বিদ্রোহী বা ম“দাতাদের বিরুদ্ধে শাস্তি কী হবে, এ ব্যাপারে কার্যনির্বাহী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হবে। অবশ্য দলের দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, তাঁরা পৌর নির্বাচনে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেই রেখেছেন। এ নিয়ে কী করা হবে, এ ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত নন। তাঁদের মতে, পৌরসভা নির্বাচনের মতো এবারও হয়তো বিদ্রোহীদের দল থেকে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়া কঠিন।
দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। দলের মনোনয়ন পাবেন না ধরে নিয়েই প্রার্থী হবেন ভাবছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী হবেন আকাশে সূর্য ওঠা দেখে। অর্থাৎ, পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা দেখে। দল কঠোর না হলে তিনিও “বিদ্রোহী” হিসেবে ইউপি নির্বাচন করবেন।’ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার একজন প্রার্থী বললেন, ‘দল বহিষ্কার করবে না। করলে সমস্যা হতো। আমি নিশ্চিত বড় শাস্তি হবে না। পৌরতেও হয়নি। তাই প্রার্থী হয়েছি। আশা করি জিতে যাব।’
আওয়ামী লীগের নেতারাই বলছেন, তৃণমূলে ভালো অবস্থান থাকার পর অনেকেই প্রার্থী হতে পারেননি। ঢাকায় এসে অনেক কিছুই বদলে গেছে। দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনিরুজ্জামানও স্বীকার করলেন সে কথা। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূল থেকে যেসব ত্যাগী নেতার নাম পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের বেশির ভাগই দলীয় মনোনয়ন পাননি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হবেন বা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড করবেন, তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। পৌরতে বিদ্রোহী ও ম“দাতাদের শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত তাঁদের প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।