Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

13kখোলা বাজার২৪ বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬:বছর আটেক আগের একটা ঘটনা হঠাৎই ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে পড়ল। আবু ধাবিতে কমেন্ট্রি করতে গিয়েছি। রোহিত শর্মা সেখানে এসেছে ভারত ‘এ’ খেলতে। রোহিতের নাম তত দিনে ভাল মতো শোনা হয়ে গিয়েছে। লোকে বলত, দারুণ ট্যালেন্ট। কিন্তু প্রথম দেখে আমার একেবারেই ভাল লাগেনি। মনে হয়েছিল, প্রতিভা থাকতে পারে। কিন্তু আত্মবিশ্বাস একেবারে নেই। মনে হয়েছিল, এ ছেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কত দূর কী করবে, সন্দেহ।
সেই রোহিত আর আজকের রোহিতে কত তফাত! সোজাসুজি বলছি, রোহিতকে এখন যত দেখছি তত মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এটাও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, ভারতের যতই একটা বিরাট কোহলি থাক। যতই একটা অজিঙ্ক রাহানে থাক। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ও-ই সেরা। বিরাট নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত। কিন্তু কোথাও যেন গিয়ে মনে হচ্ছে ও রোহিত নয়। কেন বলছি?
বুধবারের বাংলাদেশ ম্যাচটাকে দেখা যাক। ম্যাচ শের-ই-বাংলায়। হাজার-হাজার দর্শক চেঁচিয়ে যাচ্ছে। পিচ সবুজ। নামতে না নামতে ধবন আউট, কিছুক্ষণে বিরাটও। চার পেসারে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মোটামুটি কালঘাম ছুটিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ রকম পরিস্থিতিতে ব্যাটসম্যানের পক্ষে নার্ভ ঠিক রাখা খুব সহজ নয়। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। যেখানে একটা ডট বল খেলা মানে তুমি নিজেকে চাপে ফেলে দিলে। দলকেও।
সেখানে দাঁড়িয়ে রোহিতের ৫৫ বলে ৮৩ রানের ইনিংসটাকে অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। সবচেয়ে অবাক লাগল একটা ব্যাপার দেখে। খেলতে খেলতে ব্যাটসম্যান ক্যাচ-ট্যাচ তুললে সাধারণত গুটিয়ে যায়। সেখানে সাকিব ওর ক্যাচ ফেলার পর থেকে দেখলাম রোহিত বেধড়ক মার শুরু করে দিল!
আসলে এখন বোধহয় ওকে যা-ই বলা হয়, ও তা-ই করতে পারে। ওয়ান ডে-তে দু’টো ডাবল সেঞ্চুরি, টি-টোয়েন্টিতে হামেশাই ওপেনিংয়ে ভাল কিছু করে-করে ওর আত্মবিশ্বাসটাই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অন্য জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। রোহিতকে শুরু থেকে চালাতে বলুন। পারবে। আবার শিট অ্যাঙ্করের কাজ করতে বলুন। সেটাও করে দেবে। বুধবারের পিচটা ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ ছিল না। তা ছাড়া আউটফিল্ড স্লো থাকায় সহজে বাউন্ডারি আসছিল না।
রোহিতকে দেখলাম সময় নিল। প্রথম দশ ওভার কোনও তাড়াহুড়ো করল না। পরের সাত-আট ওভারে যা করার করে দিল। রোহিতের সবচেয়ে বড় গুণ হল, যতই ফিল্ডার দিয়ে ওকে ঘিরে দেওয়া হোক, ঠিক গ্যাপ খুঁজে নেবে। শট খেলার জন্য প্রচুর সময় যে বার করে নেবে। টি-টোয়েন্টিতেও এমন এমন সব ক্রিকেটীয় শট খেলবে যে, দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে। এটা যেন অলিখিত নিয়মই হয়ে গিয়েছে, যে দিন রোহিত খেলবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে স্কোর নিয়ে ভাবতে হবে না। রোহিত এ দিন মুস্তাফিজুরকে যে ছয়টা মারল দেখেছেন? অভাবনীয়। আমার তো মনে হয়, টেস্ট ম্যাচেও সাফল্য পাওয়া এখন ওর কাছে সময়ের অপেক্ষা।
আরও একজনের কথা না বললে অন্যায় হবে। হার্দিক পাণ্ড্য (১৮ বলে ৩১)। মনে হয় ধোনির এত দিনের সমস্যা হার্দিক মিটিয়ে দেবে। ধোনি মাঝেমধ্যেই বলত যে, ওর হাতে একটা পেসার-অলরাউন্ডার নেই। বডোদরার ছেলে তো সেখানে একশোয় একশো। আমার সবচেয়ে ভাল লাগে ওর মনোভাব। ব্যাট হাতে বোলারকে ভয় পাওয়াতে অসম্ভব ভালবাসে। দশ বলে পঁচিশ-তিরিশ ঠিক করে দেবে। শটে জোরও মারাত্মক। আবার বোলিংয়ের সময় ঠিক চার ওভার ওকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া যাবে।
ওকে টিমে রাখার সবচেয়ে সুবিধে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। বুধবার যেমন ধোনি ওকে আগে পাঠিয়ে নিজে পরে এল। ঠিক তেমনই দরকারে হার্দিককে আটে পাঠিয়ে লোয়ার অর্ডারকে আরও ধারালো করা যাবে। আর এতগুলো বিকল্প খুলে যাওয়ায় ধোনিকেও দেখছি ধারালো ক্যাপ্টেন্সি করছে। এ দিন কতগুলো স্লিপ রেখেছিল এক সময় দেখেছেন? টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভাবা যায়? বোলিংটাও তুখোড় হচ্ছে। যেমন অশ্বিন। তেমন নেহরা।
তেমন বুমরাহ। আর ধোনির পিঠের চোট নিয়ে ভাবার দরকার আছে বলে মনে হয় না। ইন্টারনেটে দেখছিলাম কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, চোট নিয়েও বাংলাদেশ ম্যাচে নামা ধোনির পক্ষে ঝুঁকির হয়ে গেল কি না। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে। আমি বলব, ধোনির ব্যাপার ধোনির উপরই ছাডুন। ও না বুঝে কিছু করার ছেলে নয়।
বরং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে অন্য একটা কথা ভাবুন।
ধোনির টিম কিন্তু কমপ্লিট। আমরা একটা দুর্দান্ত টিম নিয়ে বিশ্বকাপে নামছি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১৬৬-৬ (রোহিত ৮৩, হার্দিক ৩১, আল আমিন ৩-৩৭)
বাংলাদেশ ১২১-৭ (সাব্বির ৪৪, নেহরা ৩-২৩)।