খোলা বাজার২৪ বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘একচেটিয়া’ চেয়ারম্যান পদ জিতিয়ে নেওয়ার ‘অপতৎপরতা’ আড়াল করতে সরকার নানা কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করে বলেন, “ইউপি নির্বাচনে শাসকদল নিজেদের প্রার্থীদের জেতাতে যে ভয়ংকর সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাবে, সেটিকে ঢাকা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।”
তিনি বলেন, এর মধ্যে আছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সমন জারি ও ‘মিথ্যা মামলায়’ অভিযোগপত্র দাখিল; মিথ্যা মামলায় অভিযোগপত্রের মাধ্যমে নেতনেত্রীদের শাস্তির ভয় দেখানো ও প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের নানা ধরনের বক্তব্য।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা দেখতে পারছি, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে নিয়ে তাদের হৈ চৈ। তাদের মূল উদ্দেশ্য ইউপি নির্বাচন নিয়ে জনগণের চোখ ঝাপসা করা।
“সব কিছুই ভোটারবিহীন সরকারেরই কারসাজি। তারা ইউপি নির্বাচন করছে গণতন্ত্রকে বলশালী, মুখ্য কিংবা প্রণিধানযোগ্য করার জন্য নয়, বরং একদলীয় শাসন চিরজীবী করতেই এই নির্বাচন।”
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হবে। ২৩ ও ২৪ ফেব্র“য়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে ২ মার্চ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন নির্বাচনে শরীয়তপুরের নড়িয়ার ঘড়িয়ায় দলটির প্রার্থী মতিউর রহমান সাগরের বাড়ি-ঘরে হামলা-লুটপাট, কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের নুরুল হক রিপন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের নুরুল আমীনের মনোনয়নপত্র ‘অন্যয়ভাবে বাতিল’ এবং কুশলি, বর্ণি, পটগাতি ও গোপালগপুরে মনোনয়নপত্র ছেড়াসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন রিজভী।
তিনি বলেন, “আসন্ন ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ৭৫ এর বাকশালী শাসন ব্যবস্থাকে ভিন্ন পন্থায় পুনরায় প্রতিষ্ঠা করছে। ইউপি নির্বাচনের পরিণতি কী হতে পারে এই বিষয়ে বার বার বিএনপি নেতারা আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন।
“কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। আওয়ামী লীগের নীতি ও আর্দশে ন্যূনতম অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের আচার-আচরণের বালাই নেই। ইউপি নির্বাচনের নামে ভিন্ন পন্থায় বাকশালী শাসন ব্যবস্থা চূড়ান্ত করারই এটি মহড়া মাত্র।”
মুন্সিগঞ্জের যুবদল সাধারণ সম্পাদক সম্রাট ইকবালকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবিও জানান রিজভী।
বুধবার সংসদ অধিবেশনে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনবল নিয়োগে সচেতন থাকতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত, যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত, তারা যেন একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীতে আসতে না পারে, এটা দেখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর।
“সেই জামাত-শিবিরের লোক পুলিশ বাহিনীতে ঢোকার ব্যাপারে সচেতন হবে, এটাই আমি আশা করি।”
রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশে নিয়োগের নীতিমালা থাকার উল্লেখ করে তাতে সরকারের অযাচিত কোনো হস্তক্ষেপ না করার পক্ষে অবস্থান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পুলিশ বাহিনী যখন লোক নিয়োগ করবে, সেখানে দায়িত্বে থাকে তাদের কর্মকর্তারা।ৃ. এখানে আমরা ঠিক হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আমরা আশা করি, তারা তা দেখবে।”
বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতার আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীর উপর হামলার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, “অদ্ভুত দেশে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে সরকারি, বিরোধী দল কী। নির্বাচনে মধ্য দিয়ে একদল সরকারে যাবে, অন্যরা বিরোধী দলে থাকবে।
“এখানে প্রশাসনে উনি (প্রধানমন্ত্রী) ঢুকতে দেবেন না। এখন কি তাহলে আওয়ামী লীগ প্রভু। যেমন ব্রিটিশরা প্রভু ছিল ৃএখন আওয়ামী লীগ উপনিবেশিক প্রভু আর বিরোধী দল হচ্ছে তাদের শাসিত নেটিভ। এটাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী কী চান আমরা জানি না।