Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

35kখোলা বাজার২৪ রবিবার,২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: এটিএম কার্ডের তথ্য চুরিতে সহায়তা করার অভিযোগে গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইবিএল(ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড) এর কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের সদস্যদের খুঁজে বের করতে আরও কয়েকটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ হয়েছেও। প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যর বিষয়ে নিশ্চিত হলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে।
এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে গত ২১ ফেব্র“য়ারি রাতে আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য এক বিদেশী নাগরিক ও ৩ ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত তিন ব্যাংক কর্মকর্তা সিটি ব্যাংকের। আটক বিদেশী নাগরিকের নাম পিওটর সিজোফেন মাজুরেক। তিনি পোল্যান্ডের নাগরিক হিসেবে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। এসময় আটক বিদেশীর কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট ও তার জার্মান নাগরিক হওয়ার একটি পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।
সিটি ব্যাংকের আটক হওয়া তিন কর্মকর্তা হলেন মকসেদ আলম ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ও রেফাজ আহমেদ। তিন জনই ব্যাংকটির কার্ড ডিভিশনে কর্মকর্তা। পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বিদেশী নাগরিক পিওটর ওরফে থমাসকে প্রথমে আটক করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যর ভিত্তিতে প্রথমে সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মাকসুদকে গ্রেফতার করা হয়। সিটি ব্যাংকের অন্য দুই সহকর্মীর জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশকে জানায় মাকসুদ। তারপরই বাকি দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই তিন কর্মকর্তা ব্যাংকটির মার্চেন্ট অ্যাকোয়ার্ড জোনের পয়েন্ট অফ সেল(পস) লেনদেন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বে রয়েছেন।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকের লোক জড়িত থাকা ছাড়া এই কাজ করা সম্ভব নয়।
ডিবি পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সেই তথ্যের আলোকে এই চক্রের আরও কয়েক সদস্যকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এদের সবাই ব্যাংক কর্মকর্তা বলে জানিয়েছে পুলিশ। বেসরকারি ব্যাংক ইবিএল এর কিছু কর্মকর্তা পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। এই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে অন্য ব্যাংকের আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে এমন তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ।
গত ৬ থেকে ১২ ফেব্র“য়ারি- এই সময়ের মধ্যে ইবিএল, সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ছয় বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে গ্রাহকদের অজান্তে টাকা তুলে নেওয়া হয়। তবে তা জানাজানি হয় ১২ ফেব্র“য়ারি।
এসময়ে ৩৬ জন গ্রাহক তাদের একাউন্ট থেকে টাকা হারান। এর মধ্যে ইবিএল এর গ্রাহক সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের(ইবিএল) ২৪ জন, সিটি ব্যাংকের ৪ জন, ইউসিবিএল’র ৭ জন এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১ জন গ্রাহক তাদের টাকা হারিয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ২০০ জন গ্রাহক এই ৬টি বুথ ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহি পরিচালক শুভঙ্কর সাহা এ বিষয়ে বলেন, আমরা ধারণা করছি, এই ১ হাজার ২০০ জন গ্রাহকের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি হয়ে থাকতে পারে। তাই এই সকল কার্ড বন্ধ করে গ্রাহকদের নতুন কার্ড দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জালিয়াতের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ইবিএল এর ক্ষতিগ্রস্ত ২৪ জন গ্রাহককে ১৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিলেও এখন পর্যন্ত এ চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করেনি ব্যাংকটি। এটিএম কার্ড কেলেঙ্কারির বিষয়ে ইউসিবিএল গত ১২ ফেব্র“য়ারি বনানী থানায় ও সিটি ব্যাংক ১৫ ফেব্র“য়ারি পল্লবী থানায় আলাদা দুটি মামলা করে। ইউসিবিএল’র মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা করার নির্দেশনা দিলেও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড(ইবিএল) কর্তৃপক্ষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা করেনি।
গ্রেফতারকৃত পিওটর সিজোফেন মাজুরেক এর মূল নাম থমাস সিজোফেন মাজুরেক বলে পুলিশকে জানিয়েছে। অন্যের পাসপোর্ট চুরি করে থমাস নাম পরিবর্তন করে পিওটর রাখেন তিনি। ইউক্রেনে জন্মগ্রহণ করলেও পিওটর মূলত জার্মানির নাগরিক।
২২ ফেব্র“য়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নবগঠিত কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, ২১ ফেব্র“য়ারি রাতে রাজধানীর গুলশানে পিওটরের নিজের বাসা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিওটর পুলিশকে জানিয়েছে, একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে দীর্ঘদিন ধরে তারা এই জালিয়াতির কাজ করছে। প্রথমে তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের এটিএম কার্ড ক্লোন করে বুথ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে বাংলাদেশিদের এটিএম কার্ড ক্লোন করে বুথ থেকে টাকা সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে। তাদের সঙ্গে এ কাজে লন্ডন প্রবাসী এক বাংলাদেশি, বুলগেরিয়ার ও ইউক্রেনের একজন করে নাগরিকও জড়িত আছে। সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের তিন কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে। এই তিন কর্মকর্তার কাছে থাকা পাঞ্চ মেশিন দিয়ে কার্ড ক্লোন করতে ব্যবহার করা হয়। আটককৃতদের ছয় দিনের রিমান্ড চলছে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৬ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত রাজধানীর ৬টি এটিএম বুথ থেকে বেসরকারি ইস্টার্ন, সিটি, ইউসিবিএল ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩৬ জন গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয় জালিয়াতচক্র। এসময় তারা গ্রাহকের এটিএম কার্ড ক্লোন করে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে নেয়।