Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

pirojpur1451939049খোলা বাজার২৪ রবিবার,২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬,পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি ।। আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় পিরোজপুর জেলার ৫১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৯টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে পিরোজপুর জেলা বিএনপির দলীয় বিভাজনের রোষানলে পরে মনোনিত প্রার্থীদের জয় অনিশ্চিত হয়ে পরেছে।
নির্বাচনি মাঠে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামীলীগের প্রার্থী বেশি থাকলেও খুব বেশি সুবিধায় নেই বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থীরা। জেলা বিএনপির দলীয় কোন্দল এ অসুবিধার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতা কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউনিয়ন নেতা জানান, জেলা বিএনপির বড় নেতাদের বিভাজনের কারনে কয়েকটি ইউনিয়নের নির্বাচনী মাঠে রয়েছে বিদ্রহী প্রার্থী। ফলে ভাগ হয়ে কমে যাচ্ছে কর্মী সংখ্যা সাথে সাথে ভোটারদের ভোট। আবার যে সব ইউনিয়নে বিদ্রহী প্রার্থী নেই সেসমস্ত ইউনিয়নের কর্মীদের একটি ভাগ নিরব ভূমিকা পালন করছেন। আবার অনেক তৃনমূল নেতা কর্মীদের অভিযোগ, দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে দল থেকে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে  বেশির ভাগ ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জামায়াত ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের। ফলে যেসব ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী খুব সহজেই জয়লাভ করার কথা ছিল সেসব প্রার্থীরা আদৌ জয়লাভ করতে পারবে কিনা সে বিষয় সন্দেহ বাসা বেধেছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে।
জেলার ৭ উপজেলার ৩৯ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা হলেন-
পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নে আব্দুস সালাম সেখ, কলাখালী ইউনিয়নে কাজী আসাদুজ্জামান রঞ্জু, টোনা ইউনিয়নে মোঃ আবুল কালাম আব্দুল মান্নান এবং শারিকতলা ডুমরিতলা ইউনিয়নে মোস্তফা কামাল ফকির। ভান্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নে ফিরোজ আহমেদ সিকদার, ইকড়ি ইউনিয়নে মিজানুর রহমান জিম্মি, ধাওয়া ইউনিয়নে আব্দুর রশীদ খান, গৌরীপুর ইউনিয়নে ওবায়দুল হক। তেলিখালী ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেনি। স্বরূপকাঠী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে শাহীন আহমেদ, সোহাগদল ইউনিয়নে হুমায়ুন কবির, স্বরূপকাঠী সদর ইউনিয়নে নাসির উদ্দিন তালুকদার, আটঘর-কুরিয়ানায় জাকির হোসেন নান্টু, জলাবাড়িতে মেহেদী সরোয়ার, দৈহারী ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম, গুয়ারেখা ইউনিয়নে জাকির হোসেন, সমুদয়কাঠিতে আব্দুল মজিদ খান, সুঠিয়াকাঠিতে আতিকুল ইসলাম লিটু এবং সারেংকাঠিতে গোলাম মোস্তফা সরদার। কাউখালী উপজেলার সয়না-রঘুনাথপুর ইউনিয়নে মোঃ নুরুল ইসলাম, আমড়াজুড়ি ইউনিয়নে আব্দুল আলীম, কাউখালী সদর ইউনিয়নে মোঃ বদরুদ্দোজা মিয়া, শিয়ালকাঠি ইউনিয়নে মুহাম্মদ মহসীন, চিড়াপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউনিয়নে রেজাউল করিম নিরব।
জিয়ানগর উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নে সফিন কবির খান। নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাংগা ইউনিয়নে ফয়সাল আলম রঞ্জু। শাঁখারীকাঠী ইউনিয়নে মোঃ জাকির হোসেন খান, শেখমাটিয়া ইউনিয়নে মোঃ তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ এবং সদর ইউনিয়নে মোঃ আসাদুজ্জামান শিকদার।
মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালীতে ছগির হাওলাদার, ধানীসাফায় এসএম মনিরুজ্জামান মনির, মিরুখালীতে কামরুল আহসান খোকন, দাউদখালীতে মিজানুর রহমান তালুকদার, টিকিকাটায় মৃধা, বেতমোর রাজপাড়ায় এসএম ফেরদৌস রুম্মান, আমড়াগাছিয়ায় তোতাম্বর  হোসেন তোতা মিয়া, সাপলেজায় জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম জমাদ্দার, হলতা গুলিসাখালীতে তরিকুল ইসলাম মধু এবং বড় মাছুয়া ইউনিয়নে মীর মনিরুজ্জামান সগীর।
এর মধ্যে সরাসরি বিএনপি বিদ্রহী প্রার্থীরা হলেন, স্বরূপকাঠী উপজেলার সুঠিয়াকাঠি ইউনিয়নে মোঃ বাকি বিল্লাহ খান, কাউখালী উপজেলার কাউখালী সদর ইউনিয়নে শেখ মিরাজ আহমেদ এবং নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাংগা ইউনিয়নে সরদার সাফায়েত হোসেন শাহীন।
জিয়ানগরে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার রাতে জিয়ানগর প্রেসক্লাবে বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সবিন কবির খানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলত্যাগী ও আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। সাত বছর ধরে তিনি দলের সাথে জড়িত ছিলেন না। এমনকি কোন ওয়ার্ড ও থানার কোন কমিটিতে তার নাম নেই। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আঃ লতিফ হাওলাদার, উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী সাহিদা বেগমসহ বালিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন সর্দার  বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে যাদের নাম প্রস্তাব করেছিলাম তারা সবাই দলের ত্যাগী ও সক্রিয় নেতা। কিন্তু যোগ্যতা না দেখে মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের মধ্যে ১ নং ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের ফিরোজ আহম্মেদ সিকদার বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপজেলা কমিটির সদস্য। ৩ নং তেলিখালী ইউনিয়নের মির্জা গোলাম কিবরিয়া রিপন জাতীয় ছাত্র সমাজের ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি। ৭ নং গৌরিপুর ইউনিয়নের মো. ওবায়দুল হক লেবার পার্টির ইউনিয়ন সভাপতি।  তেলিখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও মির্জা গোলাম কিবরিয়া রিপনের প্রতিবেশি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আকন বলেন, আমরা কোনোদিন রিপনকে বিএনপি করতে দেখিনি। সে ছাত্র সমাজের নেতা। গৌরিপুরে মনোনীত প্রার্থী মো. ওবায়দুল হক নিজেই স্বীকার করে বলেন, আমি এক সময় লেবার পার্টি করতাম। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, গৌরিপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন পাওয়া ওবায়দুল লেবার পার্টির লোক। ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন আরো বলেন, ভান্ডারিয়া থেকে আমরা যাদেরকে বাছাই করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠিয়েছিলাম তারা হলেন, ভিটাবাড়িয়ায় ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি মো. ছিদ্দিকুর রহমান মোল্লা, তেলিখালী ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান পুত্র মো. শাহজাহান তালুকদার, গৌরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ছিদ্দিকুর রহমান ও ধাওয়া ইউনিয়ন সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান পুত্র মো. সাখাওয়াত হোসেন মালকরকে।
দায়সারাভাবে প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি গাজী নূরুজ্জামান বাবুল বলেন, জেলা ও উপজেলা কমিটির কেউ কেউ অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েই এমন সুপারিশ করেছে বলে মনে হয়। জেলা সেক্রেটারি আলমগীর হোসেন  বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নে আমাদের যোগ্য লোক থাকতেও অন্য দলের লোকদের প্রার্থী করায় মনে হয় মনোনয়নে বাণিজ্য করা হয়েছে।
পিরোজপুর জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা বিএনপির    গ্রুপিং এর কারণে এ জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবি হবে।