খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগবিদ্ধ নির্বাচন পরিচালনা করে আসা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলেছে সরকারের জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি।
নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও নির্বাচনে উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে পর্যবেক্ষণ দলটির প্রধান রাশেদ খান মেননের।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে হতাশা তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছেন সরকারের এই মন্ত্রী।
রোববার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মেনন বলেন, “বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চলছে। আমরা মনে করি এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে। কিন্তু সেই নির্বাচন যদি যথোপযুক্তভাবে পরিচালিত না হয় তাহলে দেশের মানুষ হতাশাগ্রস্ত হবে।
“নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী, কিন্তু তারা নির্বাচনে উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না।”
কমিশন নিয়ে নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “গত পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগের রাতে ভোটের বাক্স ভর্তি করা, ভোট কাটা, বুথ দখল ইত্যাদি নানা অভিযোগ এসেছে। কিন্তু কমিশন কোনো অভিযোগের বিষয়ে কর্ণপাত করেনি।”
গত বছর এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় অনিয়মের নানা ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। কোথাও কোথাও নির্বাচন কর্মকর্তাকেই জাল ভোট দিতে দেখা যায়।
এর পরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনেও কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি, বিরোধী দল সমর্থিতদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ এসেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বিচ্ছিন্ন’ কিছু ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।
আগামী ২২ মার্চ থেকে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে শুরু হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দল সমর্থিতদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। প্রথম দফায় ৬৩৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭০টিতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি।
তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কেবল সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই তদন্ত করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
এই প্রসঙ্গ টেনে রাশেদ খান মেনন বলেন, “এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আমরা দেখছি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমার দলের প্রার্থীরা বাধা পেয়েছে। কিন্তু এগুলো কমিশন মোটেও হিসেবে নিতে রাজি নয়। তারা অভিযোগগুলোকে বাক্সবন্দি করে রেখে দিয়েছে।
“বলছে, এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তফসিল রক্ষা করা যাবে না। তফসিল রক্ষা করব নাকি নির্বাচনকে রক্ষা করব- সেটাই আজকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বলে মনে করি।”
ইউপি ভোট সুষ্ঠু করার তাগাদা দিয়ে মন্ত্রী মেনন বলেন, “আমরা ২০০৮ সালসহ বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছি। এবারও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটপ্রদানের অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে জনগনের মধ্যে যে হতাশা সৃষ্টি হবে তার ফলে সমস্ত নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষ আস্থা হারাবে।
“মানুষ আর নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করবে না। জনগণের ভোটাধিকারের বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।”