খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২ মার্চ ২০১৬ : পর্যটন ভিসায় এসে বছরের পর বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন বিদেশিরা। সেক্ষেত্রে তারা কোনো ওয়ার্ক পারমিটও গ্রহণ করেননি। অবৈধভাবে কাজ করছেন এমন বিদেশিদের চিহ্নিত করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্সে বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করবেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। প্রাথমিকভাবে গার্মেন্ট, আইটি, কনসালটেন্সি ফার্ম, বায়িং হাউস, হোটেল, খেলোয়াড়, সার্ভিস সেক্টর ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিদেশিদের চিহ্নিত করার কাজটি করা হবে বলে জানা যায়।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২ লাখ বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করছে। এর মধ্যে মাত্র ২০ হাজার বিদেশি সরকারকে কর দিচ্ছেন। বাকি সবাই বিভিন্ন সময়ে এসে কাজ করে চলে যাচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক বিদেশিদের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স ছাড়া চলে যাচ্ছে। এই বিদেশিদের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং হচ্ছে বলেও সম্প্রতি রাজস্ব বোর্ডে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্স বৈঠকে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজস্ব বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশিদের কর ফাঁকির বিষয়টি আমরা দেখছি। কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করার বিষয়টি দেখবে বিনিয়োগ বোর্ড বা পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখা। এই কারণে সকলের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিমান বন্দরে একটি ইনকাম ট্যাক্স সেল খোলারও চিন্তা রয়েছে। যেভাবে কাস্টম অফিসাররা কাজ করে একইভাবে ইনকাম ট্যাক্সের কর্মকর্তারা কাজ করবেন। অর্থাৎ কোনো বিদেশি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় তার ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট প্রদর্শন করবেন। যদি ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট না থাকে তবে তাকে আটকে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তিনি যদি ১৫ দিন কাজ করেন তার নিয়োগকর্তার সার্টিফিকেট লাগবে। সেখানে লেখা থাকবে এই ব্যক্তির ১৫ দিনের আয়ের ট্যাক্স কোম্পানি বহন করবে। পরে কোম্পানি থেকে ট্যাক্স সংগ্রহ করে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ভ্যাটের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, ওয়ার্ক পারমিটহীন কর্মরত বিদেশিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। অনেক বিদেশি শিল্পী এখানে অনুষ্ঠান করতে আসছেন। আমরা নিয়ম করেছিলাম বিদেশি শিল্পীদের এদেশে অনুষ্ঠান করতে হলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের অনুমতি দরকার পড়বে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। শিল্পীরা ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে অনুষ্ঠান করে চলে যাচ্ছেন। শিল্পীরা চলে যাক কিন্তু তাদেরকে যারা এনেছেন তাদের ওপর আমরা ট্যাক্স ও ভ্যাট আরোপ করব। এ ছাড়া একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্স এসব তথ্য উদ্ঘাটনে কাজ করবে।
তিনি বলেন, কর আইনে বিমানবন্দরে কর কর্মকর্তাদের ইউনিট খোলার বিধান রয়েছে। আগে এটি বলবতও ছিল। পরবর্তী সময়ে এটি তুলে নেওয়া হয়। টাস্কফোর্সের বৈঠকে এ বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। এটি করা হলে দেশ থেকে মানিলন্ডারিংও কমে যাবে। কারণ তিনি ট্যাক্স সার্টিফিকেটে যে অর্থ প্রদর্শন করেছেন তাই তাকে নিয়ে যেতে দেওয়া হবে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের বেশি বেতনে নিয়োগ দিয়ে কম বেতন ইনকাম ট্যাক্স দেখায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রস্তাব করেছে বিদেশিদের বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে হবে। ব্যাংক সার্টিফিকেট ও ইনকাম ট্যাক্স সার্র্টিফিকেট দুটি মিলালেই আসল জিনিসটা বের হয়ে আসবে। তবে যেসব দেশ আমাদের সঙ্গে দ্বৈতকরারোপ চুক্তিতে রয়েছে, তাদের নাগরিকদের যেকোনো একটি দেশের সার্টিফিকেট দেখালেই চলবে।