খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৫ মার্চ ২০১৬ : স্পর্শ কী? কেন আমরা বড়দের পা ছুঁয়ে প্রণাম করি? কেন বড়রা মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন? কেন মায়ের স্পর্শে বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট দূর হয়ে যায়? কেন বাবার পরম স্নেহস্পর্শ নতুন করে শক্তি সঞ্চার করে মনের মধ্যে? কী আছে সামান্য ছোঁয়ায়? প্রশ্ন অনেক। উত্তর একটাই। শক্তি। “টাচ হিলিং” (আরও স্পষ্ট করে বললে ঞড়ঁপয ঞযবৎধঢ়ু) নিয়ে কম গবেষণা করেননি বিজ্ঞানীরা। বারবার একই পরিণামে উপনীত হয়েছেন তাঁরা, “জীবনে স্পর্শ জরুরি”। এ ছোঁয়া মামুলি নয়। এক অপরিসীম শক্তির আধার। এক শরীর থেকে অন্য শরীরে সঞ্চারিত এনার্জি। যার ফলে মায়ের নরম হাতের ছোঁয়া কষ্ট দূর করে। কেউ মাথায় হাত রাখলে এক উষ্ণ অনুভূতি নেমে আসে। এসবই অনুভূতির কথা। কিন্তু সত্যি এটাই যে স্পর্শ করলে এক নিদারুণ শক্তি সঞ্চার হয়। কীরকম? তারই কিছু নিদর্শন ছড়িয়ে আছে পৃথিবীতে। তেমনই ৩টি ঘটনা আপনাদের জন্য তুলে ধরছি। আজ রইল তার প্রথম নিদর্শন-
ঘটনাটি ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসের। পশ্চিম ম্যাসাচুসেটসের একটি হাসপাতালের নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ১২ সপ্তাহের প্রিমেচিওর ডেলিভারি হয় যমজ বোন টাইনি কাইরি জ্যাকসন ও ব্রিয়্যাল জ্যাকসনের। জন্মের তিন সপ্তাহ পর থেকেই ছোট্ট ব্রিয়্যালের পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। নিশ্বাসের কষ্টে হৃদস্পন্দন প্রায় থেমে যায়। অক্সিজেন লেভেল ধাপে ধাপে কমতে থাকে। সারা শরীর নীল হয়ে যায়। তাকে বাঁচানো তখন প্রায় অসম্ভব। ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দেওয়ায় হাসপাতালের একজন নার্স বলেন, ব্রিয়্যালকে টাইনির পাশে কিছুক্ষণ শুইয়ে রাখলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হতে পারে।
কোনও চিকিৎসা, কোনও ওষুধই যখন আর কাজ করেন না ব্রিয়্যালের শরীরে, তখন নার্সের পরামর্শকেই আমল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। ব্রিয়্যালকে তার কট থেকে সরিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয় বোন টাইনির পাশে।
টাইনি বোনকে আদরে জড়িয়ে ধরে নিজে থেকেই। হাত রাখে পিঠে। এবং তখনই ঘটে চমৎকার। ব্রিয়্যালের শরীরিক পরিস্থিতি আপনে আপ শুধরাতে শুরু করে। অক্সিজেন লেভেল নিয়ন্ত্রণে আসে। হৃদযন্ত্রও ঠিক মতো কাজ করতে শুরু করে। স্রেফ বোনের স্পর্শই তাকে নতুন করে বাঁচিয়ে তোলে।
টাইনি ও ব্রিয়্যালের এই আলিঙ্গনপূর্ণ কাহিনি গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছিল সেসময়। হাসপাতালের কটে শোয়া দুই যমজ বোনের আলিঙ্গনের ছবি ও কাহিনি প্রথমে ছাপা হয়েছিল একটি স্থানীয় পত্রিকায়। ও তারপর খবরটি ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে।
আরও একটি কথা জানা গেছিল এই দু-বোনকে দেখে। তা হল স্পর্শ। স্পর্শে এমন শক্তি আছে, যা মরণাপন্ন মানুষের শরীরে পুনরায় প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে। ভালোবাসাপূর্ণ ছোঁয়া সব রোগের অবসান ঘটাতে পারে। তখনই বোঝা যায়, আমাদের জীবনে স্পর্শটা কতটা জরুরি।
ব্রিয়্যাল ও টাইনির ঘটনার পর কেটে গেছে ২১টা বছর। আজ তারা দু-জনেই প্রাণোচ্ছল যুবতি। দু-বোনের খুব ভাব। আজও যখন বইয়ের পাতায় জন্মের সেই কাহিনি দেখে ব্রিয়্যাল। খুদের ছোঁয়ায় এত কি শক্তি আছে ? বড় হয়ে ব্রিয়্যাল বলত শুনে, “ভাগ্যে বোন ছিল আমার কাছে।”