খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৬ মার্চ ২০১৬ : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ৩৯ বছর পর কবর থেকে এক মুক্তিযোদ্ধার দেহাবশেষ তোলা হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।
শনিবার শালবাড়ি গ্রামের কবর থেকে আজিমুল হকের (২২) দেহাবশেষ তোলার সময় প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আজিমুলের ভাই আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৬ সালে দুর্বৃত্তরা আজিমুলকে হত্যা করলেও ঘটনাস্থল ছিটমহল হওয়ায় তৎকালীন দেবীগঞ্জ থানা মামলা নেয়নি।
গত বছর ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার পর ২৯ ডিসেম্বর আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে আমলী আদালত-৩-এ মামলা করেন।
স্থানীয় আবদুর রহমান, তার ছেলে রফিকুল ইসলাম ও ভাই খলিলুর রহমানসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর সকালে আজিমুলের বাবা হকমউদ্দিন নিজ জমি চাষ করছিলেন। এ সময় আসামিরা ওই জমি নিজেদের দাবি করে চাষে বাধা দেয়। এ সময় বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে আসামিরা কয়েকজনকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং আজিমুলকে বিষাক্ত ফলাযুক্ত তীর বিদ্ধ করে। পরদিন দুপুর ১২টায় আজিমুল অচেতন অবস্থায় মারা যান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বোদা থানার উপ-পরিদর্শক দীন মোহাম্মদ জানান, আদালত একজন নির্বাহী হাকিমসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে কবর থেকে দেহাবশেষ সংগ্রহ ও পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে।
“উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী হাকিম আবু আউয়ালের উপস্থিতিতে কবর খোঁড়ার পর দুপুর ২টার দিকে মাটির রঙের মতো বেশ কিছু উপাদান সংগ্রহ করা হয়। পরে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে সংরক্ষণ করা হয় রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য।”
দেহাবশেষ সংগ্রহের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রাজিউল করিম রাজু বলেন, “দীর্ঘদিন আগে মৃতদেহ দাফন করায় মানবদেহের দেহাবশেষের মতো সুস্পষ্ট কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি।
“তবু রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য আমরা বেশ কিছু উপাদান সংগ্রহ করেছি। সেগুলো ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
বাদী আরিফুল বলেন, “সে সময় মুক্তিযোদ্ধা আজিমুলের বয়স ছিল ২২ বছর এবং আমার বয়স ছিল সাত বছর। সেদিনের ঘটনার কথা আমার পুরোপুরি স্মরণ আছে। মৃত্যুর চার মাস আগে আজিম ভাই বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রী এখন আর বেঁচে নেই।”
দেহাবশেষ উত্তোলনের সময় বড় ভাই আজিজার রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছলছল চোখে বলেন, “আট ভাইবোনের মধ্যে আমরা সবাই আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি। সবারই সন্তান-সন্ততি আছে। শুধু আজিমুল নেই। ওর কথা মনে পড়লেই বুকটা ফাঁকা হয়ে যায়। মনে হয়, কী যেন নাই, কী যেন নাই।”
এলাকার মু্ক্িতযোদ্ধা আছিম উদ্দিন বলেন, “আজিমুল বৃহত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছিলেন। তার বিষয়ে সবাই জানত। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার সনদ (এফএফ-১৩৬/০৭) এবং ভারতীয় গেজেটেও (নং-৩৭৩৮৮) তার নাম আছে।”