খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৭ মার্চ ২০১৬ : বনশ্রীর বাসায় দুই সন্তান নুসরাত আমান অরণী ও আলভী আমান হত্যাকাণ্ডের রহস্যের এখনও কোনো কূল-কিনারা পাওয়া যায়নি। স্বামীর পরকীয়ার প্রতিশোধ না মানসিক সমস্যার কারণে হত্যা নাকি ঘাতক মা মাহফুজা প্রকৃত ঘটনা বা নেপথ্যের কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সেই জটলা খুলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পাশাপাশি রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
দুই শিশুকে হত্যার অভিযোগে রিমান্ডে নেয়া নিহতদের গর্ভধারিণী মা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও রোববার পর্যন্ত তিনি নতুন কোনো তথ্য দেননি। এ কারণে হত্যাকা-ের তদন্তে সেই একই জায়গায় রয়ে গেছেন তদন্তকারীরা। ফলে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিলেও স্পষ্ট উত্তর বা সুরাহা মিলছে না।
এদিকে, দুই শিশুকে তাদের মা মাহফুজা নিজেই শ্বাসরোধে খুন করেছেন বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করে হত্যাকা-ের যে কারণগুলো জানিয়েছেন, তাও বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘দুশ্চিন্তায়’ মাহফুজা এ হত্যাকা- ঘটানোর কথা বললেও তিনি কোনো মানসিক রোগী (পাগল) নন বলেও পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, মাহফুজার কিছুটা মানসিক অসুস্থতা থাকলে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রেও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মাহফুজা সম্পর্কে ব্যাখ্যা নেয়া হয়েছে। সেটি তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাঁচ দিনের রিমান্ডের রোববার ছিল দ্বিতীয় দিন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, মাহফুজা প্রকৃত ঘটনা বা নেপথ্যের কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় রোববার দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল তথা রামপুরার বনশ্রীর বি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার সেই বাসা আবারও পরিদর্শন করেছে মামলার তদন্তকারী দল। দুই পুলিশ কর্মকর্তা বাসায় ঢুকে আলামত দেখাসহ নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন বলে জানান ওই বাড়ির কেয়ারটেকার পিন্টু মিয়া। তিনি জানান, পঞ্চমতলার বাসাটি বর্তমানে তালাবদ্ধ। সেখানে গৃহকর্তা তথা নিহত দুই শিশুর বাবা ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ এখন থাকছেন না। ঘটনার পর একদিন পুলিশসহ এসে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে আবার চলে যান।
রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মাহফুজা তার দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় নতুন কোনো তথ্য দেননি। ঘুরেফিরে একই কথা বলছেন তিনি। পরকীয়ার জেরে এ হত্যাকা- ঘটে থাকতে পারে বলে যে গুঞ্জন উঠেছে, সে সম্পর্কে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ প্রসঙ্গে মাহফুজা ও তার স্বামী আমান উল্লাহকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পরকীয়ার মতো কোনো তথ্যই তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। স্বামী-স্ত্রী দুজনই স্পষ্ট বলেছেন, এ ধরনের কোনো সম্পর্ক তাদের কারোরই নেই। এ ধরনের বিষয় নিয়ে পরস্পর কেউ কাউকে দোষারোপও করেননি।