খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১৬ : ৩৬*, ২৩* ২২*, ৩৩*। এশিয়া কাপে এই হলো মাহমুদউল্লাহর টানা চার ইনিংস। এর মধ্যে সর্বশেষ ইনিংসটি আবার ১৩ বলে ৩৩ রানের। গত বিশ্বকাপে নিজেকে নতুন করে চেনানো মাহমুদউল্লাহ এবার আবারও নিজের নতুন চেহারা নিয়ে হাজির। প্রয়োজনে পুরোদস্তুর টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ব্যাটসম্যান হতেও জানেন। চারটি ইনিংসেই অপরাজিত ছিলেন বলে প্রশ্ন উঠেছে, আরও ওপরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলে প্রত্যেকটি ইনিংস লম্বা হতেই পারত।
এশিয়া কাপে মাহমুদউল্লাহ ছয়-সাতে ব্যাটিং করেছেন। দুটি ইনিংস বাদে টি-টোয়েন্টির ৩৯টি ইনিংসেই ব্যাট করেছেন পাঁচ থেকে সাতে। যদিও গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে চার নম্বরে জায়গা পাওয়ার পর থেকেই নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন। ওয়ানডেতে চারে জায়গা পেলে টি-টোয়েন্টিতে কেন এত নিচে ব্যাটিং করতে হয়? বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহর সেই চারটি ইনিংসই যেখানে বলছে, প্রতিটি ইনিংসেই দলকে আরও দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাঁর।
এ বছর থেকে টি-টোয়েন্টিতে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর জায়গাটি পাকাপাকি করে ফেলেছেন সাব্বির রহমান। এই পজিশনে দুর্দান্ত খেলছেন। গত এশিয়া কাপে সব দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ রানের মালিকও ছিলেন। চার-পাঁচ নম্বর জায়গা দুটি মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের জন্য মোটামুটি পাকা। ফলে ছয় নম্বর ছাড়া জায়গা হচ্ছে না মাহমুদউল্লাহর।
কিন্তু সাকিব-মুশফিক দুজনের সাম্প্রতিক নড়বড়ে ফর্মের কারণে একটা প্রশ্ন উঠছে, এই দুজনের আগে মাহমুদউল্লাহকে পাঠানোই দলের জন্য ভালো হবে। টি-টোয়েন্টি এমনিতেই ২০ ওভারের খেলা। ফর্ম বিবেচনায় দলের এখনকার সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানটির সামর্থ্যের পুরো ব্যবহার তো করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ দল সম্ভবত দুটি কারণে দ্বিধায় ভুগছে। মুশফিকও ছয়-সাতে ব্যাটিং করার মতো ব্যাটসম্যান নন। আর সাকিবও যে একবারেই বাজে ফর্মে আছেন, তাও নয়। অন্তত ব্যাট হাতে তাঁর ফর্মে ফেরার আভাস মিলেছে এশিয়া কাপে ৩২ আর ২৬ রানের দুটি ইনিংসে।
এশিয়া কাপ শেষে প্রশ্নটা তাই উঠল। ফাইনালেও মাহমুদউল্লাহ সাতে ব্যাটিং করে আড়াই শর ওপরে স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন। তাঁর ওই ইনিংসটা না হলে বাংলাদেশ ১২০-এর পুঁজি যেমন পেত না, আবার এও সত্যি, যে ২০ রানের ঘাটতির জন্য বাংলাদেশ হেরে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে, আরও ওপরে সুযোগ পেলে মাহমুদউল্লাহই হয়তো এনে দিতে পারতেন সেটি।
এ নিয়ে সেদিন সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে অধিনায়ক এতটুকু বলেছেন, ‘কে কোন পজিশনে ব্যাটিং করবে এটা দলের ভালোর কথা বিবেচনা করেই ঠিক করা হয়।’ মাহমুদউল্লাহও এমন মানুষ নন, যিনি মুখ ফুটে বলবেন, ‘আমাকে আরও ওপরে সুযোগ দাও।’ নীরবে নিজের কাজ করে যাওয়াতেই তাঁর আনন্দ। কিন্তু তাঁর হয়ে কথা বলছে পরিসংখ্যান।
এশিয়া কাপের আগে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১০৭, এশিয়া কাপে সেটি ১৬৬। আর ওয়ানডে রেকর্ড দেখলে বোঝা যাচ্ছে, চার নম্বরটাই তাঁর আসল জায়গা। এখানে ব্যাটিং করে মাহমুদউল্লাহর গড় ৭৫.৮৫।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড তাই শুধু চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পাওয়া নয়, সঠিক ব্যাটিং অর্ডার খুঁজে পাওয়ার মিশনও হয়তো হবে বাংলাদেশের জন্য।