Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

20kখোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০১৬ : বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাস এখনো পুলিশের নির্যাতনের কথা ভুলতে পারেননি। রাস্তায় পুলিশ বা পুলিশের গাড়ি দেখলেই ভয় পান। দুজনই বলেছেন, তাঁরা এই দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি চান।
২৭ বছরের যুবক রাব্বী ও ৪০ বছর বয়সী বিকাশ চন্দ্র বছরের শুরুতে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। দুজনকেই হাসপাতালে থাকতে হয় দীর্ঘদিন। বর্তমানে শারীরিক অবস্থা প্রায় ভালোর দিকে। তবে দুজনকেই এখন পর্যন্ত মানসিক চিকিৎসার থেরাপি নিতে হচ্ছে। কোনো দোষ না করেও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টি তাঁরা মানতেই পারছেন না।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, বড় ধরনের ট্রমা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ ভয়ংকর অভিজ্ঞতার ফলে মস্তিষ্কে তাৎক্ষণিকভাবে আঘাতজনিত মানসিক সমস্যা এবং আঘাত পরবর্তী মানসিক বিপর্যয় দেখা দেয়। আঘাতের পর ভয়াবহ ঘটনার কোনো অনুষঙ্গ দেখে বা মনে করে মস্তিষ্কে আবার আতঙ্ক তৈরি হয়। এতে ওই ব্যক্তি প্রতিনিয়ত ভয়ের মধ্যে থাকেন বা ভয় পেতে থাকেন।
এই ধরনের ব্যক্তিদের মানসিক কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি অনেকের ক্ষেত্রে ওষুধও দিতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অবহেলা করলে দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গত ৯ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর ভয় দেখিয়ে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ শিকদার অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেন। ওই সময় রাব্বীকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে জোর করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন তিনি। রাব্বীর ঘটনাটি ওই সময় তোলপাড় তোলে। এখন তিনি ব্যাংকে কাজে যোগ দিয়েছেন। এখন তাঁর একটাই চাওয়া—তিনি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চান। রাব্বী এখনো বিশ্বাসই করতে পারছেন না, আসলেই পুলিশের হাত থেকে প্রাণ নিয়ে তিনি ফিরে আসতে পেরেছেন।
রাব্বী বলেন, ‘শরীরের অবস্থা মোটামুটি ভালো। তবে পুলিশ, পুলিশের গাড়ি, পুলিশ সংক্রান্ত আলোচনা, খবর, আমার ঘটনা আবার কেউ জানতে চাইলে বা আলোচনা করলেও বুকের মধ্যে কেমন যেন লাগে। ওই সময়ের ঘটনা মনে পড়ে যায়। ভয় লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসার জন্য নিয়মিত থেরাপি দিতে যাচ্ছি। ছয় মাস এ থেরাপি নিতে হবে। মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন কোর্সও করছি।’
মামলা না করা প্রসঙ্গে রাব্বী বলেন, ‘ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লক্ষ্যে আর মামলা করিনি।’
আর ১৫ জানুয়ারি দয়াগঞ্জে নিজের বাড়ি থেকে দিবাগত ভোর রাত চারটার দিকে সায়েদাবাদ এলাকায় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বিকাশ। মীর হাজীরবাগ এলাকায় সাদা পোশাকধারী পুলিশের চারজন সদস্য তাঁকে থামার সংকেত দেন। তিনি (বিকাশ) ছিনতাইকারী ভেবে মোটরসাইকেল ফেলে দৌড় দেন। পরে পুলিশ তাঁকে ধরে ফেলে। তিনি পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ তাঁকে বেধড়ক পেটায়। লাঠি ও পিস্তলের বাট দিয়ে মাথায় মারে। এ ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পর যাত্রাবাড়ী থানার এএসআই আকাশ, রাসেল, এসআই মনোজসহ কয়েকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিকাশের পরিবারের সদস্যরা জানান, বিকাশের চিৎকার শুনে আশপাশের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এগিয়ে আসেন। পরে পুলিশ সদস্যরা চলে যেতে চাইলে পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে পুলিশকে আটকে রাখেন তাঁরা। পরে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) অন্য সদস্যরা এসে ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের নিয়ে যান। ওই সময় অচেতন অবস্থায় ভ্যানগাড়িতে পড়ে ছিলেন বিকাশ।
বিকাশ চন্দ্র দাসের এক ছেলে ও এক মেয়ে। বিকাশ টেলিফোনে বলেন, ‘শরীর বেশি ভালো না। মাথা আর পায়ে ব্যথা আছে। একা হাঁটতে গেলেই ভয় লাগে। মাথা ঘুরে পড়ে যাই। বুকের মধ্যে সব সময় ভয় ভয় লাগে। এখন পর্যন্ত কাজে পুরোপুরি যোগ দিতে পারি নাই। পুলিশ দেখলে কেমন জানি ভয় লাগে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাকে নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। বিচারকাজ চলছে।