Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1kখোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১১ মার্চ ২০১৬ : দীর্ঘ সময় নিয়ে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে নিখুঁতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি করা হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি ও যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের কেউ সহায়তা করেছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, ‘হ্যাক’ করে এ অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোও বলছে, আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী ব্যবস্থা সুইফটের (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন-এসডব্লিউআইএফটি) বাংলাদেশ ব্যাংকের অংশে ঢুকে দীর্ঘদিন ধরে পুরো ব্যবস্থাটিকে নজরদারিতে রেখেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের কী পরিমাণ অর্থ চলতি হিসাবে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ছিল, সেই তথ্যও নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া কী কী উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চলতি হিসাবের অর্থ লেনদেন বা স্থানান্তর করা হতো, এসব বিষয়ও পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে বাংলাদেশের রিজার্ভের মোট যে অর্থ তার বড় অংশই বন্ডসহ বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ উপকরণে বিনিয়োগ করে রাখা। আর নিয়মিত লেনদেনের জন্য একটি অংশ রাখা হয় চলতি হিসাবে। গড়ে এ চলতি হিসাবে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের মতো রাখা হতো বলে বাংলাদেশ ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। চলতি হিসাবে নিয়মিত লেনদেনের জন্য রাখা অর্থের পুরোটাই চুরির চেষ্টা করা হয়েছিল। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘অথেনটিক’ ব্যবস্থা থেকে ৩৫টি ‘পরামর্শ বা অ্যাডভাইসও’ পাঠানো হয়েছিল। যদিও তার মধ্য থেকে ৫টি পরামর্শ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যাওয়ায় তাতে ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রিজার্ভের চলতি হিসাবের অর্থ থেকে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বৈদেশিক দেনা-পাওনা মেটানোসহ ঋণ পরিশোধ করা হতো। পরে তা ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হতো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ ও পরামর্শক ফি হিসেবে রিজার্ভের চলতি হিসাব থেকে অর্থ পরিশোধ করা হতো। সেই তথ্যকেও কাজে লাগিয়েছে এ অর্থ চুরির ক্ষেত্রে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটের সংকেতলিপি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের যেসব ‘পরামর্শ’ গিয়েছিল, সেগুলোতে কারণ হিসেবে পরামর্শক ফি ও ঋণ শোধের কথা উল্লেখ করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গতকালও ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর। সে দেশে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তাদের দিক থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আশাবাদ আরও জোরালো হয়েছে।’
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অত বড় ঘটনা ঘটলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারত গেছেন গভর্নর আতিউর রহমান। গতকাল সকালে তিনি দিল্লির উদ্দেশে দেশ ছাড়েন।
ঘটনাটির বিষয়ে জানতে ই-মেইলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের যোগাযোগ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রিয়া প্রিস্টর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার জবাবে গতকাল প্রিস্ট জানিয়েছেন, লেনদেনের নির্দেশগুলো দ্রুতগতির বার্তা আদান-প্রদানকারী সুইফটের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া ও প্রটোকল অনুসরণ করে এসেছিল। ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে ফেড। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতাও অব্যাহত রয়েছে। প্রিস্ট তাঁর ই-মেইলে আরও বলেন, এ লেনদেনের ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের অপব্যবহার করা হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।