খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ ২০১৬ : আগামী ২০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে আদালতে সশরীরে হাজির হতে হবে। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) এ দুই মন্ত্রীর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশনা ছিল।
সকালে আদালতে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত থাকলেও খাদ্যমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় তিনি সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি। এ প্রেক্ষিতে খাদ্যমন্ত্রীর আইনজীবী বাসেত মজুমদার সময়ের আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন নয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রফিকুল হক।
গত ৮ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে তলব করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে নয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে নোটিশ জারি করেন।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মীর কাসেমের মামলার বিচারকাজে তদন্ত সংস্থার ‘গাফিলতি’র কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং তদন্ত সংস্থা যে গাফিলতি করেছে এজন্য তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।’
প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের পর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতি থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।’ এ প্রেক্ষিতে গত ৫ মার্চ প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের আপিলের পুনঃশুনানি দাবি করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই মামলার রায় কী হবে তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি। তার বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি, এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। জামায়াত-শিবিরের আন্তর্জাতিক লবিস্টরা যে সুরে কথা বলছে একই সুরে কথা বলছেন প্রধান বিচারপতি। তাদের অভিযোগগুলোর সত্যতা দিয়েছেন তিনি।
‘শুধু তা-ই নয় এই বক্তব্যের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের গত ৫ বছরের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও হত্যা করা হয়েছে। আমি মনে করি প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন করে শুনানি হওয়া উচিত। উনাকে (এসকে সিনহা) বাদ দিয়ে মীর কাসেমের শুনানি পুনরায় শুরু করুন।’
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ৪৫ বছরে অনেক বিচারপতি এসেছে আর গেছে, কিন্তু কেউ তার মতো এত অতিবক্তব্য দেয়নি। তার অতিকথনে সুধী সমাজের মানুষেরা জিহ্বায় কামড় দিচ্ছেন। তাই তাকে অতিকথন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর তা না হলে সরকারের নতুন করে বিকল্প চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে আমি মনে করছি।’
আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলছি, এই রায় নিয়ে শঙ্কা এখন সংকটে পরিণত হয়েছে। তবে এ সংকট আমাদের সৃষ্ট নয়। সংকট সৃষ্টি করেছেন প্রধান বিচারপতি। এটাই আমাদের দুঃখ। রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি যদি এমন কথা বলেন, তাহলে জাতি কোথায় যাবে?’
সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে কথার উত্তাপ। আইনজীবীসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন চূড়ান্ত রায়ের আগে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, তাদের বক্তব্য অসাংবিধানিক।