খোলা বাজার২৪,বুধবার, ১৬ মার্চ ২০১৬: দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে চাঙ্গা হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত কয়েক বছরে মাঠের লড়াইয়ে টানা ব্যর্থতার পরও কাউন্সিলকে ঘিরে গা ঝাড়া দিতে চায় দলটি। নিস্ক্রিয় ও বিতর্কিত নেতাদের এড়িয়ে এবার ত্যাগী ও নতুন নেতৃত্বের হাতেই দায়িত্ব তুলে দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটিসহ অন্য কমিটির আকার বাড়ানোর চিন্তাও করছে দলটি।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতে, দলটি যেন ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য জাতীয় কাউন্সিল প- করতে সরকার নানামুখী কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এই নীলনকশার অংশ হিসেবে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড়সহ পদে-পদে বাধা সৃষ্টি করছে সরকার। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ মার্চ ৬ষ্ঠ বারের মতো জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করছে বিএনপি। সাত বছর পর এই কাউন্সিল সফল করতে এরইমধ্যে প্র¯‘তি নিয়েছে দলটি। কাউন্সিলকে ঘিরে রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ-প্রত্যাশ। আর এই প্রত্যাশা বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেন, বহুল প্রত্যাশিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে দলের সুন্দর নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা উচিত। ত্যাগী, একনিষ্ঠ ও প্রাজ্ঞদেরই সামনে আনা উচিত। তিনি বলেন, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে অনেক সময় ফারাক থাকে, সেটা পরে বোঝা যাবে। আমরা মনে করি, দলের নেতৃত্বে যোগ্যরাই প্রাধান্য পাবেন।
স্থায়ী কমিটির আকার বাড়ানো প্রসঙ্গে দলের এই নেতা আরও বলেন, আকার বাড়ানো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। খবরের কাগজে বিভিন্ন তথ্য আসছে। দলের স্থায়ী কমিটির আকার বাড়ানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি করি না। বরং ১৯ সদস্যের কমিটির আকার কমানো যেতে পারে। এরইমধ্যে তিনটি পদ শূন্য হয়েছে, বয়সের কারণে দুজন শীর্ষ নেতা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কমিটির সদস্য সংখ্যা মূল কথা নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম পলিটিক্যাল পার্টি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, এই পার্টির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। অথচ এই পার্টির প্রেসিডিয়ামের সদস্য মাত্র ৭ জন। আকার বাড়ানো-কমানো মূল বিষয় নয়, যোগ্য ও ত্যাগীদের দলের নেতৃত্বে আনতে হবে।
কাউন্সিল ঠেকাতে কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন কায়দায়, কৌশলে নানা ধরনের উস্কানি দিচ্ছে। ইউপি নির্বাচনের নামে মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় করা হচ্ছে। যেন আমরা সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিল আয়োজন না করতে পারি। স্থান সংকুলানের ক্ষেত্রেও আমাদের একটা গ-ির মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজনের অনুমতি চেয়েছিলাম, এর বিপরীতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠানের অনুমতি পেয়েছি। আমরা ওই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে খোলা প্রাঙ্গণও ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছি। এরমধ্যেই আয়োজন সম্পন্ন করতে হবে।
ষড়যন্ত্র করে কোনোভাবেই বিএনপির কাউন্সিল ঠেকানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সরকার তো বলছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে না। কিন্তু আমরা পদেপদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মতো জায়গায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি তো দূরের কথা, জেলা কমিটির কাউন্সিলও কখনো হয় না। তারপরও সেখানেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সেটিও একটি ঝুঁকির দিক।