খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৮ মার্চ ২০১৬ : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির তদন্তের মধ্যে আলোচনায় উঠে আসা তানভীর হাসান জোহার খোঁজ না পেয়ে পুলিশের কাছে গিয়েও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
সরকারের আইসিটি বিভাগের সাইবার সিকিউরিটি ফোকাল পয়েন্টের কর্মকর্তা পরিচয়ে সম্প্রতি রিজার্ভ চুরির তদন্তের নানা বিষয়ে তানভীর গণমাধ্যমে কথা বলছিলেন।
এরপর আইসিটি বিভাগ থেকে জানানো হয়, তানভীর জোহার সঙ্গে বিভাগের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। তখন তানভীর বলেছিলেন, তিনি আগে এই বিভাগের কাজে যুক্ত ছিলেন।
তানভীরের পরিবার জানিয়েছে, বুধবার মধ্যরাত থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তারা।
জোহার স্ত্রী ডা. কামরুন নাহার বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, “গতকাল(বুধবার) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। তখন বলেছিল, বাসায় ফিরছে। কিন্তু রাত ১২টার পর থেকে মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।”
ইয়ামিন নামে তানভীরের এক বন্ধু জানিয়েছেন, তাকেসহ তানভীরকে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিরা তুলে নিয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দিলেও তানভীরকে নিয়ে চলে যায়।
তানভীরের চাচা বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, “রাত ২টার দিকে ইয়ামিন এসে বলে, তানভীর তাকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ডেকে নিয়েছিল। পরে তারা একসাথে বাসায় ফেরার জন্য একটি সিএনজি অটোরিকশায় ওঠে। হঠাৎ করেই এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই একটি জিপ তাদের সামনে এসে থামে এবং কিছু না বলার আগেই দুজনকে আলাদা করে ফেলে। এরপরেই ইয়ামিনকে একটি গাড়িতে করে মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়।”
ইয়ামিনের কাছে খবরটি প্রথমে কলাবাগান থানায় যান তানভীরের পরিবারের সদস্যরা। ‘তাদের এলাকা নয়’ বলে তাদের কাফরুল থানায় যেতে বলা হয়। সেখানে গেলে তারা ক্যান্টনমেন্ট থানায় যেতে বলে।
“সেখানে গেলে তারা বলে আবার কাফরুল থানায় যেতে। কাফরুলে আবার গেলে তারা বলে, এলাকাটি ভাষানটেক থানা এলাকায়। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত পুলিশের সাহায্য পেয়ে হতাশ হয়ে ভাষানটেক থানায় আর যাইনি,” বলেন মাহবুবুল আলম।
কামরুন নাহার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন জায়গায় বলা হলেও কেউ তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।
কাফরুল থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন বলেন, “ওরা মৌখিকভাবে আমাদের বলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখেছি, এটা ভাষানটেক থানা এলাকায় পড়েছে। তাদের ওই থানায় যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়।”
ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, তাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
ভাষানটেক থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, “কাফরুল থানার ওসি এ ব্যাপারে আমাকে ফোন করেছিলেন। তবে অপহরণ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেনি।
“কেউ এলে আমরা ঘটনাস্থল যাচাই করে বলতে পারব যে কোন থানায় পড়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জোহাকে আটক করার কথা কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না জানালেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “দেখেন যাকে যাকে সন্দেহ হচ্ছে, সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এদের ধরছে।”
তাহলে কোনো বাহিনীই তানভীরকে আটক করেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারব না। তদন্তের স্বার্থে হয়ত অ্যারেস্ট করতে পারে। তবে আমি জানি না।”
রিজার্ভ চুরির মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তবে তানভীরকে আটকের কোনো খবর সিআইডি কর্মকর্তারা স্বীকার করেননি।
তানভীর বলেছিলেন, হ্যাকিংয়ে মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ঘটনায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ‘ছায়া তদন্তকারী’ হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
তবে ওই গোয়েন্দা সংস্থার নাম প্রকাশ করেননি তিনি। কোনো সংস্থার পক্ষ থেকেও বলা হয়নি যে তানভীর তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তানভীরের কলাবাগানের বাসায় গেলে স্বজনরা জানান, সরকারের প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছেন তানভীর।
“মূলত সাইবার ক্রাইম নিয়ে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং দেশের স্বার্থে সে তাদের সহযোগিতা করে আসছিল,” বলেন চাচা মাহবুবুল আলম।
কামরুন নাহার জানান, মঙ্গলবার বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন তার স্বামী। কাজের কারণে মাঝে-মধ্যে রাতে বাইরে থাকতেন তিনি। মঙ্গলবার রাতেও বাইরে ছিলেন, তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল। বুধবার দিনের বিভিন্ন সময়েও কথা হয়েছিল তাদের।