খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৯ মার্চ ২০১৬ : ছয় বছরের অপেক্ষা শেষে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে ঘণ্টা গুণছে বিএনপি। কাউন্সিলের জন্য ইতোমধ্যে দলটি সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ করে এনেছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-ইআইবি প্রাঙ্গণে হতে যাচ্ছে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল।
কাউন্সিলের মাধ্যমে দল ঘুরে দাঁড়াবে বলে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ষষ্ঠ কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। নতুন নেতৃত্ব দেশনেত্রীর নেতৃত্বে গড়ে উঠা গণতন্ত্র ফিরিয়ে সংগ্রামকে সফল করবে।”
বিকালে প্রস্তুতি নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য কাউন্সিলের সেবা ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেন, “আমরা কাউন্সিলের সব কাজ শেষ করে নিয়ে এসেছি। নানা সীমাবদ্ধতা ছিল, এখনও আছে। তারপরও রাতেই আমাদের মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ হবে।
কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপ কমিটির সদস্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এতো স্বল্প পরিসরের জায়গায় আমাদের এরকম একটি বিশাল দলের কাউন্সিলে আয়োজন কঠিন বিষয়। কাউন্সিলরসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের আসন দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
“ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের যে প্রাঙ্গণটিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে সেখানে কোনো মতে চার হাজার আসন বসানোর ব্যবস্থা করছি। অথচ আমাদের আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি। এরপর আছে ডেলিগেইটরা।”
ডেলিগেইটদের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই কাউন্সিলে আগামী তিন বছরের জন্য দায়িত্ব যাবে নতুন নেতৃত্বের হাতে; গঠনতন্ত্রতে আনা সংশোধনীও অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।
ছয় বছর আগে ‘নানান মানুষ, নানান পথ, দেশ বাঁচাতে ঐক্যমত’- স্লোগানে পঞ্চম কাউন্সিল হলেও এবারের স্লোগান করা হয়েছে- ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’।
সকাল ১০টায় কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিন পর্বে অনুষ্ঠান
তিন পর্বে ভাগ করা বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের কর্মসূচির মধ্যে উদ্বোধনী পর্বে আছে- জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা, দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির পতাকা উত্তোলন ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনা, কাউন্সিল-২০১৬ এর জন্য তৈরি থিম সং পরিবেশন এবং বেলুন উডিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ঘোষণা।
অনুষ্ঠান শুরু হবে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, রামায়ন, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে।
স্বাগত বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আর খালেদা জিয়ার বক্তব্যের আগে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান।
মধ্যাহ্নভোজ ও নামাজের বিরতির পর বিকাল ৩টায় শুরু হবে দলের মূলপর্ব- জাতীয় কাউন্সিল।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ইআইবি মিলনায়তনে রূদ্ধদ্বার কাউন্সিলে ‘চেয়ারপারসন’ ও ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ পদে নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে দলের গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন পেশ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ, সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সন্ধ্যায় তৃতীয় পর্বে থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (তৎকালীন চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র) বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল হয়েছিল।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রমনার বটমূলে প্রথম কাউন্সিল করেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার ১৯৮২ সালের ফেব্র“য়ারিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায় এবং খালেদা জিয়া ১৯৮৯ সালে তৃতীয় কাউন্সিল করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিটিউশনে।
১৯৯৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির চতুর্থ কাউন্সিল।
১৯৮১ সালে ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হলে ১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়া দলের হাল ধরার পর থেকে এই পর্যন্ত তিন বার দলের কাউন্সিল করেন; এবার নিয়ে হবে চতুর্থ।
প্রস্তুতির নানাদিক
শুক্রবার সন্ধ্যায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গিয়ে দেখা গেছে টানানো হচ্ছে সামিয়ানা। গোটা এলাকা ছেয়ে গেছে ব্যানার-ফেস্টুনে। শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত সড়কের লাইট পোস্টে ঝুলতে দেখা গেছে বিভিন্ন নেতার মুক্তি চেয়ে লাগানো ফেস্টুন।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরের খাবার পরিবেশনার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বুথ থাকবে। এছাড়া মূল প্যান্ডেলের কাছেই স্থাপন করা হয়েছে মেডিকেল সেবা কেন্দ্র, যেখানে সার্বক্ষণিক চিকিসকরা থাকবেন।
এদিকে অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মঞ্চের চারপাশেসহ বসানো হয়েছে সিসিটিভি। দলীয়ভাবে এক হাজার জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন।