খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২১ মার্চ ২০১৬ : সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধান নিয়ে রিট আবেদনকারীদের ‘মস্তিক বিকৃত’ আখ্যায়িত করে আদালতকে ‘জনগণের ভাষা’ বুঝে রায় দিতে বলেছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, যারা তিন বছর আগে ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ থেকে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছিল।
সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “আমরা আদালতকে মানি। তবে আশা করি আদালত এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে তৌহিদী জনতা মাঠে নামে এবং দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।”
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রশ্নে প্রয়োজনে ‘গণভোট’ আয়োজনেরও দাবি তুলেছেন হেফাজত নেতারা।
সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে কার্যত বিরোধী দলবিহীন চতুর্থ জাতীয় সংসদে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২ (ক) যুক্ত করে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’।
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখনই ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।
২৮ বছর আগের ওই আবেদনের ভিত্তিতে দেওয়া রুলের ওপর আগামী ২৭ মার্চ হাই কোর্টের বৃহ্ত্তর বেঞ্চে শুনানি শুরু হচ্ছে। এর প্রতিবাদেই হেফাজতের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।
লিখিত বক্তব্যে আজিজুল হক বলেন, ২০১১ সালের ২৫ জুন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ২ অনুচ্ছেদটি সংশোধন করে। সেখানে বলা হয়- প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।
“এখানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের অবস্থান অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক অধিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের অনুকূল। প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি করা হোক।”
হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর সাথে আলোচনা করেই সংবাদ সম্মেলনের এই বক্তব্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে ইসলামাবাদী জানান। অবশ্য হাটহাজারী মাদ্রাসার মহা পরিচালক শফী নিজে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “১৯৮৮ সালে এরকম একটি রিট করা হলে আদালত তা সাথে সাথে খারিজ করে দিয়েছিলেন। বর্তমান আদালত কেন এই রিট সাথে সাথে খারিজ না করে গ্রহণ করল?
“ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে এরকম রিট গ্রহণ করা যায় না। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কোনো কুচক্রিমহল পাখি শিকার করতে চাইছে।”
বাবুনগরীর দাবি, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে বাংলাদেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে। রাষ্ট্রধর্ম ‘কেড়ে নেওয়া’ হলে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ‘ছারখার’ হয়ে যাবে।
“আমরা সে রকম কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না। তবে রিটের রায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিপক্ষে গেলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে সেটা আদালতকে জানিয়ে দিতে চাই। জনগণের ভাষা বুঝতে আদালতকে অনুরোধ করছি।”
অন্যদের মধ্যে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রূহী, সিনিয়র নায়েবে আমীর শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, সহ অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াছ ওসমানী, উত্তর জেলার সহ-সম্পাদক ইছহাক মেহরী, মাওলানা আ ন ম আহমদ উল্লাহ ও মাওলানা মুনির আহমদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ।