খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৬ মার্চ ২০১৬: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।
শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন ওই ঘটনায় কেন সদ্যসাবেক গভর্নর আতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না?
মওদুদ বলেন, “শুধু তদন্ত কমিটি করলে হবে না। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্ত করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
“অতীতে এমন আরও টাকা চলে গেছে কিনা- আমরা তো জানি না। সেটাও তদন্ত করে দেখা দরকার। দেশের মানুষ অন্ধকারে আছে।”
রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য মওদুদ তার দাবির পক্ষে বলেন, “ভবিষ্যতে যাতে আর এরকম ঘটনা না ঘটে সেজন্য এই ধরনের তদন্ত হওয়া উচিৎ।”
রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার লোপাটের ঘটনা প্রায় এক মাস চেপে রাখায় সমালোচনার মধ্যে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
প্রবল চাপের মুখে গত ১৫ মার্চ গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান এবং সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সাবেক অর্থ সচিব ফজলে কবিরকে নতুন গভর্নর করা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর লোক দেখানো একটা পদত্যাগ করে কী বুঝাতে চেয়েছেন জানি না।
“তিনি দায়িত্ব নিয়ে থাকলে এখনও কেন সরকার গ্রেপ্তার করে না? এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে এনে সেটা বের করা হচ্ছে না কেন- এটাই আমাদের আজকে প্রশ্ন।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লোপাটের বিষয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ হয়েছে দাবি করে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, “তারা (বিশেষজ্ঞ) বলতে চান, কোনো হ্যাকিং হয় নাই। বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকিং করা সম্ভবপর নয়। যে কম্পিউটারাইজড সিস্টেম আছে সেখানে ঢুকা সম্ভব নয়। এটা একেবারে লোহার দেওয়ালের মতো।”
“বঙ্গভবনে যদি চুরি হয়, বঙ্গভবনের বাইরের কারও কি চুরি করা সম্ভব? অসম্ভব। এতো গার্ড, এতো পাহারা, এতো কিছু। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। এখানে বাইরের থেকে কেউ কিছু করে নাই। কোনো হ্যাকিং হয় নাই।”
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের ‘হাজার হাজার কোটি টাকা’ লোপাট হওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আতিউর রহমানের পদত্যাগের প্রসঙ্গ তুলে মওদুদ বলেন, “শুধুমাত্র তিনি পদত্যাগ করেছেন, ঠিক আছে। ভালোই করেছেন। কিন্তু তার পদত্যাগে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের সেই টাকা যারা চুরি করেছে তাদেরকে কি ধরা সম্ভবপর হবে? দেশের মানুষ জানতে চায়। হবে না।
“কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ও সরকারের ম“পুষ্ট ব্যক্তিরা এর সঙ্গে নিশ্চয়ই জড়িত আছেন। যার জন্য এদেশের মানুষ কখনোও এই টাকাটা ফেরত পাবে না বলে আমি মনে করি।”
ফজলে কবিরকে নতুন গভর্নর করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আজকে শুনলাম সোনালী ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যে কলঙ্ক ছিল, যাকে নিয়ে ছিল, তাকে নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর করা হয়েছে। আমি জানি।
“এ ব্যাপারে সাংবাদিক ভাইদের বলব, এটা ইনভেস্টিগেট করে দেখবেন। তিনি কী করে একটা দায়িত্বের নেতৃত্ব দিতে পারেন?”
সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, “ঘটনার পর গভর্নর অনেক আগে জেনেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কিন্তু সেটা দেশের মানুষকে জানানো হয়নি। আমি এখান থেকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, এদেশটা কারও বাপের লালপট্টি নয়, কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।
“দেশের রিজার্ভ লুট হয়ে যাচ্ছে- কেন মানুষ জানতে পারলে না। একমাস পরে বিদেশে যখন এ ব্যাপারটি প্রকাশ হয়ে গেল, তখন বাংলাদেশ স্বীকার করতে বাধ্য হলো।