খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৬ মার্চ ২০১৬ : মুস্তাফিজুর রহমানের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের আনন্দ ম্লান বাংলাদেশের বাজে ব্যাটিংয়ে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দেড়শ’ রানের নিচের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ধারে কাছে যেতে পারেনি মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের কাছে ৭৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
শনিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৪৫ রান করে নিউ জিল্যান্ড। জবাবে ১৫ ওভার ৪ বলে ৭০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
শুরুতেই ফিরেন তামিম ইকবাল (৮ বলে ৩ রান)। দ্রুত এক রান নিতে গিয়ে একটু দেরি করেন এই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। শর্ট থার্ড ম্যান থেকে সরাসরি থ্রোয়ে কলিন মানরো স্টাম্প ভেঙে দিলে রান আউট হন তিনি।
মিচেল ম্যাকক্লেনাগানের স্লোয়ার বল একটু সরে গিয়ে অফে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন মোহাম্মদ মিঠুন (১৭ বলে ১১ রান)।
মিচেল স্যান্টনারের বল উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে লংঅনে নাথান ম্যাককালামের ক্যাচে পরিণত হন সাকিব আল হাসান (৬ বলে ২ রান)।
দলের বিপদ বাড়িয়ে ফিরে যান সাব্বির রহমান (১৮ বলে ১২ রান)। নাথান ম্যাককালামের বলে লংঅনে মিচেল স্যান্টনারের হাতে ধরা পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
স্টাম্পড হয়ে ফিরে যান সৌম্য সরকার (৮ বলে ৬ রান)। লেগ স্পিনার ইশ সোধির বলে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে পারেননি তিনি। সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি লুন রনকি।
শূন্য রানে ফিরেন মুশফিকুর রহিম। গ্র্যান্ট এলিয়টের বলে বোল্ড হন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
লেগ স্পিনার ইশ সোধির বলে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ (৮ বলে ৫ রান)। গুগলি বুঝতে পারেননি তিনি, বল তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্প ভেঙে দেয়।
গ্র্যান্ট এলিয়টের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন মাশরাফি বিন মুর্তজা (৫ বলে ৩ রান)।
ছক্কা হাঁকিয়ে ফিরেন মুস্তাফিজুর রহমান (তিন বলে ৬ রান)। গ্রান্ট এলিয়টের বলে উইকেটরক্ষক লুক রনকির গ্লাভসবন্দি হন তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রথমবার ৫ উইকেট উপহার দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। খারাপ করলেন না মাশরাফি-আল আমিনও। তবে মন্থর, নিচু বাউন্সের উইকেটে বিবর্ণ স্পিনাররা। বোলিংয়ের মতো ফিল্ডিংও হলো ভালো-মন্দ মিশিয়ে। চ্যালেঞ্জটা দাঁড়াল তাই বেশ কঠিন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টেনের ম্যাচের কলকাতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৫ রান করেছে নিউ জিল্যান্ড। উইকেটের আচরণ প্রথম ইনিংসের মতোই থাকলে রান তাড়াটা সহজ হওয়ার কথা নয়। কিউরা একাদশ সাজিয়েছে তিনজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে।
মুস্তাফিজের জন্য উইকেট ছিল আদর্শ। একটু গ্রিপ করেছে বল, ব্যাটে এসেছে থেমে। তরুণ বাঁহাতি পেসার মেলে ধরেছিলেন নিজের জাদুর পসরা। স্লোয়ার, কাটার আর গতি-বৈচিত্রে খাবি খাওয়ালেন কিউই ব্যাটসম্যানদের। টি-টোয়েন্টিতে আগে কখনোই ম্যাচে ২ উইকেটের বেশি পাননি। এবার ২২ রানে ৫ উইকেট, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা বোলিং।
টস ভাগ্য আবারও মুখ ফিরিয়ে নেয় মাশরাফির থেকে। মার্টিন গাপটিলকে বিশ্রাম নিয়ে অভিষিক্ত হেনরি নিকোলসকে ওপেনিংয়ে নামায় নিউ জিল্যান্ড। বাঁহাতি প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান অবশ্য ডানা মেলতে পারেননি।
তবে আরেক পাশে কেন উইলিয়ামসন ছিলেন নিজের সৌন্দর্যময় সেরায়। দারুণ টাইমিং, নিখুঁত প্লেসমেন্টে খেলেছেন চোখ জুড়ানো কিছু শট। মাশরাফির করা প্রথম ওভারে দৃষ্টি নন্দন দুটি ড্রাইভে চার যেমন। সাকিবকে ইনসাইড আউটে চার, কিংবা ডাউন দা উইকেটে যে ছক্কা মারলেন, বল যেন টেরও পায়নি ব্যাটের আঘাত। আলতো করে সেফ্র ভাসিয়ে দিয়েছেন হাওয়ায়!
দুই ওপেনারকেই ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। দারুণ এক স্লোয়ার-কাটারে বিভ্রান্ত হয়েছেন নিকোলস, বল এতটা ভেতরে ঢুকেছে যেন কোনো বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনারের দারুণ টার্নিং বল!
দারুণ খেলতে থাকা উইলিয়ামসনও পেরে ওঠেননি মুস্তাফিজের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে। শাফল করে এলোমেলো করে দিতে চেয়েছিলেন বোলারকে। কিন্তু দারুণ এক স্লোয়ারে বোকা বানিয়েছেন কিউই অধিনায়ককে। নাড়িয়ে দিয়েছেন স্টাম্প (৩২ বলে ৪২)।
পরের বলেই আউট হতে পারতেন কলিন মানরো। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে কেন যে সাড়া দিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকার আম্পায়ার ইয়োহান ক্লোয়েটে, সেটি একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। টিভি রিপ্লে দেখাল বল লাগল মিডল স্টাম্পের মাঝে! রান ছিল তখন তার ১২ বলে ৮।
এমনিতে দারুণ আক্রমণাতœক মানরো অবশ্য এদিন মন্থর উইকেটে ধুঁকছিলেন শুরু থেকেই। বেশ কিছুক্ষণ উইকেট কাটিয়ে ঝড় তোলার চেষ্টা করলেন মাহমুদউল্লাহকে এক ওভারে চার ও ছক্কা মেরে। ছক্কা মারলেন আল আমিনকেও। তবে ওই ওভারেই নিচু হয়ে যাওয়া বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড মানরো (৩৩ বলে ৩৫)।
বিপজ্জনক কোরি অ্যান্ডারসনকে শূন্য রানে ফেরান মাশরাফি। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিতে পারতেন টেলরের উইকেটও। কিন্তু সহজ ক্যাচ ছাড়েন আল আমিন। টেলর জীবন পাওয়া উদযাপন করলেন সাকিবকে ছক্কা মেরে। সেই আল আমিনই পরে ফিরিয়েছেন টেলরকে (২৮)।
শুভাগতর দারুণ ক্যাচে মুস্তাফিজ আগেই ফিরিয়েছেন এলিয়টকে (৯)। শেষ ওভারে রনকি-স্যান্টনারদের ঝড় তুলতে দেননি মুস্তাফিজ। দারুণ দুটি কাটারে টানা দুবলে ফেরান রনকি ও নাথান ম্যাককালামকে। ৫ উইকেটের ৪টিই বোল্ড!
শেষ ডেলিভারি ছিল হ্যাটট্রিক বল। স্লোয়ার বলটি আগেই পড়ে গ্যালারিতে পাঠান ম্যাকক্লেনাগন।
মুস্তাফিজের বোলিং সাফল্য তাত ম্লান হচ্ছে না। তবে আরেকটু কঠিন হয়ে গেল বাংলাদেশের রান তাড়া।