খোলা বাজার২৪, রোববার, ২৭ মার্চ ২০১৬ : চিহ্নিত কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের পর আসা ৪৫তম স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ফিরেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসা অনেকের কণ্ঠে।
শনিবার একাত্তরের বীর শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে জাতি। স্বাধীনতা দিবস পালনের মূল কেন্দ্র সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ছিল লাল-সবুজের পতাকা হাতে, পতাকার রঙের পোশাকের মানুষের ঢল।
ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনার পর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শীহদদের শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়ার সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়।
জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ এলাকার মূল ফটক, মানুষের ঢলের শুরু এখানে।
এর মধ্যে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্মৃতিসৌধের মূল বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তার সঙ্গে দলের বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদী।
মানুষের এই ভিড়ে মেয়ে আফরা আনান রাফাকে কাঁধে নিয়ে স্মৃতিসৌধ এলাকায় ঘুরতে দেখা যায় ঢাকার বাড্ডার বাসিন্দা আকতার হুদাকে।
নিজে যেভাবে লাল-সবুজের পোশাক গায়ে জড়িয়েছেন, মেয়ের সাজও ছিল প্রায় একই রকম। এর সঙ্গে রাফার হাতে শোভা পাচ্ছিল একটি গোলাপের তোড়া আর লাল-সবুজ পোশাকের পিঠের অংশে বড় অক্ষরে লেখা, ‘গর্জে উঠো বাংলাদেশ লাল-সবুজের চেতনায়’।
আকতার হুদা জানান, প্রতিবছর এই দিনে মেয়েকে নিয়ে এখানে আসেন তিনি। এক্ষেত্রে তার চেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের আগ্রহই বেশি থাকে।
“শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে ফুল দিই। অনেক ভালো লাগে।”
সকালে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “আমরা যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, সেই লক্ষ্যের দিকে দেশ এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যেও এক শ্রেণির রাজনৈতিক দল পাকিস্তানপন্থি রাজনীতি করছে।
“যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। সব বাধা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এই প্রত্যাশা করছি।”
এগিয়ে যাওয়ার গতিধারা অব্যাহতের প্রত্যাশার পাশাপাশি শিক্ষক সমাজকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
“অগ্রগতির ধারা বাধাগ্রস্ত করতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি থেমে নেই। তাই এ সময়ে শিক্ষিত মানুষদের সজাগ থাকতে হবে যাতে সমাজ জেগে থাকে।”
এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় এসেছে বিএনপির কাছ থেকেও; সম্প্রতি দলীয় চেয়ারপারসনের দেওয়া ‘ভিশন-২০৩০’ ধরে এগিয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা জানান দলটির নেতারা।
শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে আমাদের স্বাধীনতার ৪৫ বছর হতে চলেছে। এখন সময় এসেছে নতুন সমাজ ও নতুন দেশ গড়ার জন্য বেগম জিয়া যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ‘গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন’ দেশ গড়ার সংগ্রাম বেগবান করার আকাক্সক্ষা জানিয়েছেন বিএনপির আরেক নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসে জাসদের একাংশের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন জঙ্গিবাদকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, বৈষম্য দূর করে দুর্নীতিবাজ ও দলবাজমুক্ত দেশ গঠন করতে হবে।”
র কিছুক্ষণ পরই মঈনুদ্দিন খান বাদলের নেতৃত্বে শহীদ বেদীতে ফুল দেন সম্প্রতি ইনু নেতৃত্ব্ধাীন জাসদ থেকে বেরিয়ে একই নামে দল ঘোষণাকারী নেতারা।
জাতীয় পতাকা হাতে স্মৃতি সৌধে ফুল দিতে আসেন অসংখ্য মানুষ। পাশাপাশি সজাগ (সমাজ ও জাতি গঠন), গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনকেও জাতীয় পতাকা নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।
স্কুল বা কলেজের ড্রেসে সার বেঁধে শ্রদ্ধা জানাতে আসে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অনেকে দলবেঁধে আসেন লাল-সবুজের পোশাক পরে।
মুখে লাল-সবুজ উল্কি এঁকে কিংবা গায়ে একই রঙের পোশাক জড়িয়ে অনেক বিদেশি নাগরিককেও জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে দেখা যায়।
শ্রদ্ধা জানানোর এই ঢল থেকে বাদ যাননি সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) চিকিৎসাধীনরাও। অন্যের সহায়তা নিয়ে হুইল চেয়ারে চেপে কিংবা ক্র্যাচে ভর দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন তারা।