Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

27খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০১৬ : আট দিন পার হলেও সোহাগী জাহান (তনু) হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনো জমা পড়েনি প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। এরই মধ্যে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তনুর লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল সোমবার আদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম জয়নব বেগম।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়, তনুর মৃতদেহ পুনরায় ময়নাতদন্ত এবং তাঁর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা জরুরি। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, অধিকতর তদন্তের স্বার্থে লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত পুলিশকে ক্ষমতাপত্র ইস্যু করেছেন।
মৃত্যুর কারণ অজানা: ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী তনুর লাশ পাওয়া যায়। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত হয়। এরপর আট দিন পার হলেও সেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা দেয়নি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ।
এর কারণ জানতে চাইলে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে বেশ কিছু পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। এগুলোর ফলাফল পেতে কমপক্ষে ১০ দিন লেগে যেতে পারে। সব প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের একাধিক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেছেন, এটি একটি ‘কমপ্লেক্স কেস’। সুরতহাল প্রতিবেদনে যে রকম বিবরণ এসেছে, প্রথম দফার ময়নাতদন্তের ফলও তা-ই। এ জন্য তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ভিসেরা প্রতিবেদন জরুরি। পরীক্ষার জন্য ভিসেরার নমুনা চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।
তনু হত্যাকাণ্ডপুলিশের তৈরি লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তনুর মাথার চুল বিক্ষিপ্তভাবে কাটা ছিল। মুখের বাম পাশে আঁচড়, কানে নখের দাগ ও নাকের নিচে রক্ত লেগেছিল।
ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকেরা বলছেন, আঘাতের কারণে নাক থেকে রক্তপাত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু তনুর শরীরের কোথাও ধারালো কোনো অস্ত্রের আঘাত, কাটাছেঁড়া নেই। গলা টিপে হত্যা করা হলে, গলায় গভীর দাগ বা রক্ত জমাটবাঁধা থাকে—এ ক্ষেত্রে তেমনটিও দেখা যায়নি। শরীরে অন্য কোনো নির্যাতনের চিহ্নও পাওয়া যায়নি বলে ওই চিকিৎসকেরা দাবি করেন। তাই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে তাঁরা আরও রাসায়নিক পরীক্ষা করে দেখছেন।
অবশ্য পুলিশ সূত্র জানায়, তারা তনুর মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেনি। তারা পরদিন ২১ মার্চ সকালে কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে তনুর লাশ গ্রহণ করে। তখন যে অবস্থায় লাশ পেয়েছে তার ওপরই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা: গতকাল দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তনু হত্যার তদন্ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভা-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশ তদন্তের জন্য আরও সময় চেয়েছে। ঘটনাস্থল সংরক্ষিত এলাকায় হওয়ায় তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধার কথাও বলা হয়। পুলিশ বলেছে, কোনো অপরাধের ঘটনা তদন্তে প্রয়োজনীয় জায়গায় পুলিশ তথ্যদাতা (সোর্স) নিয়োগ করে থাকে। ঘটনাস্থল সেনানিবাসের ভেতরে হওয়ায় তথ্যদাতা নিয়োগে তারা অসুবিধায় পড়ছে।
সভায় জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ এ নিয়ে কাজ করছে। ডিবি মামলার তদন্ত করলেও র্যা বসহ অন্যান্য বাহিনী ছায়া তদন্ত করছে।
জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. ওমর ফারুক, কুমিল্লার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
পরে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে সবাই এককাট্টা। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তনু হত্যায় শোক প্রকাশ করা হয়। কমিটির কয়েকজন সদস্য এ হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। একই সঙ্গে আসামিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।