খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০১৬ : দেশের পুঁজিবাজারের সূচকের অব্যাহত পতনের পেছনে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) টাকা আটকে থাকা, বিনিয়োগকারীদের মাঝে সৃষ্ট আস্থাহীনতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উপর আরোপিত ‘কড়াকড়িকে’ অন্যতম কারণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ‘বিনিয়োগ সীমা ও সময়’ সংক্রান্ত আইন ‘ঠিক করার’ পাশাপাশি সরকারকে ‘কার্যকর’ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত ১৯ জানুয়ারির পর প্রায় টানা কমেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স । সেদিন সূচক ছিল ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্ট; কমতে কমতে সোমবার তা পৌঁছেছে ৪ হাজার ৩০৩ পয়েন্টে।
সূচকের এই অবস্থান প্রায় সাড়ে ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে এর চেয়ে কম ছিল ২০১৫ সালের ১০ মে; সেদিন সূচক ছিল ৪ হাজার ২৭৭ পয়েন্ট।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান অধ্যাপক মিজানুর রহমান এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারের প্রশাসন সংকট ঘনীভূত হয়েছে ।”
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হওয়ায় ‘সবাই’ পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছে মন্তব্য করে অধ্যাপক মিজানুর বলেন, “সূচক কমে যাচ্ছে, সব শেয়ারের দাম পড়ে যাচ্ছে। এখন সরকারের উচিৎ হবে পুঁজিবাজারে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।”
মোস্তাক আহমেদ সাদিক মোস্তাক আহমেদ সাদিক বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তারল্য সঙ্কট ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ‘সাপোর্ট’ না থাকা দায়ী বলে মনে করেন ব্রোকারেজ হাউজ ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদিক।
তিনি বলেন, “বাজারে বিভিন্ন কারণে তারল্যের আভাব রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকেও কোনো সাপোর্ট পাচ্ছে না।”
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) সভাপতি মোহা. সায়েদুর রহমান মনে করেন, শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হবে না।
মোহা. সায়েদুর রহমান মোহা. সায়েদুর রহমান তিনি বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার ক্ষমতা আইন করে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন ঠিক করতে হবে। না হলে শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে পুঁজিবাজার ঠিক হবে না।”
ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর সর্বশেষ সংশোধনী (২০১৩ এর সংশোধনী) অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিবেচনা করে ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি না থাকলে কোনো ব্যাংক তার আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম স্থিতি, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না। কোনো ব্যাংকের এর বেশি বিনিয়োগ থাকলে তা ২০১৬ সালের ২১ জুলাইয়ে মধ্যে নামিয়ে আনতে বলা হয়।
বিএমবিএ সভাপতি সায়েদুর বলেন, “পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা শুধু বাড়ালেই হবে না; প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেন আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারে সেই সীমাও বাড়াতে হবে।”
এই দাবির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “বিনিয়োগ সমন্বয় করে ৫০টি প্রতিষ্ঠান বসে থাকলে পুঁজিবাজারে টাকা আসবে না; বাজারও ভালো হবে না।
এমরান হাসান এমরান হাসান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরান হাসানের সঙ্গেও।
তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারে আস্থার অভাব আছে; পাশাপাশি আছে তারল্যের অভাব।
“একমির আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও ১৬০ কোটি টাকা লাগবে। আর একমির আইপিওতে কয়েকগুণ আবেদন পড়লে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা সেখানেই আটকে যাবে।”
পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে কিছুদিন আইপিও বন্ধ রাখার পরামর্শও দিয়েছেন ব্রোকারেজ হাউজ ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদিক।
তিনি বলেন, “আইপিওতে প্রচুর টাকা আটকে যাচ্ছে। কিছুদিন আইপিও বন্ধ করলে বাজারে ভালো প্রভাব পড়তে পারে।