খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০১৬ : ধনীদের বিভিন্ন ধরনের অভ্যাস ও কৌশল থাকে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত সম্পদ রক্ষাণাবেক্ষণ এবং তা ক্রমশ বৃদ্ধির কাজে তারা এসব অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন ধনীদের এমনই ১৫টি অভ্যাসের কথা যার প্রয়োগে তারা সম্পদ বৃদ্ধি করে চলেন।
১. আবেগপ্রবণ হবেন না : অর্থ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কখনো আবেগপ্রবণ হতে নেই। এ নিয়মটি মেনে চলেন ধনীরা। ১৯৬০-এর দশকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ড. ওয়াল্টার মিশেল এক গবেষণায় জানান, আবেগপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দ্রুত গতিতে কিছু পাওয়ার চেয়ে ধীরে চাহিদা পূরণ হলে তৃপ্তির মাত্রা বেড়ে যায়। এতে ভুলও কম হয়।
২. চাহিদা ও প্রয়োজনের পার্থক্য বোঝেন : চাওয়া ও প্রয়োজনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিশাল একটা বাড়ি বা দামি পোশাক চাহিদা হতে পারে। কিন্তু এর প্রয়োজন রয়েছে কি? ধনীরা প্রয়োজন মিটিয়ে তারপর চাহিদা পূরণে চিন্তার করেন। এতে অর্থের অপচয় হয় না।
৩. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেন : পেনি স্টক মিলিওনিয়ার টিমোথি স্কাইস বলেন, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণে ন্যূনতম ১-৫ বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু এসব লক্ষ্য নির্ধারণে ধনীরা এগিয়ে। তারা তাৎক্ষণিক কিছু পেতে চান না। ধীরে ধীরে বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।
৪. আয়ের একাধিক উৎস : ধনীদের আয়ের একাধিক উৎস থাকে। একটি উৎসের ওপর নির্ভর করেন না তারা। একটি উৎস শুকিয়ে গেলে অন্য উৎস দিয়ে ঠিকই টিকে থাকেন তারা।
৫. স্বয়ংক্রিয় বিনিয়োগ : তারা রোবটের মতো নিজেদের ওপর নির্দেশনা জারি করেছেন। স্থায়ী খরচগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেয়। আবার একটি উৎসের লাভের অংশ হয়তো অন্য কোনো উৎসের বিনিয়োগ হিসাবে খাটে। এ সবই অটোমেটিক পদ্ধতিতে হয়ে যায়। এতে করে হাতে অর্থ নিয়ে তা খরচের ঝামেলা থেকে মুক্তি পান তারা। তা ছাড়া এতে খরচের খাত এলোমেলো হয়ে যায়।
৬. বাজেট মেনে চলেন : ধনীরা জানেন কত অর্থ আসছে আর যাচ্ছে। সে অনুযায়ী বাজেট মেনে চলেন। প্রচুর অর্থ থাকলেও তারা বেহিসাবী নন। গবেষণায় বলা হয়, যত ধনীই হন না কেন, তারা সবাই যার যার বাজেট করে নিয়েছেন।
৭. জরুরি অবস্থার ফান্ড : জীবনে নানা ধরনের জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে ব্যবসায় মন্দা আসতেই পারে। এ সব পরিস্থিতি সামলাতে ধনীরা পৃথক ফান্ডের ব্যবস্থা করে রাখেন। বলা হয়, টানা এক বছরের ধকল সামলানোর মতো অর্থ জরুরি ফান্ডে রাখতে হয়।
৮. বিনিয়োগ সেখানেইৃ : ধনীরা একমাত্র সেই সব খাতে বিনিয়োগ করেন যার সম্পর্কে তারা বোঝেন। অচেনা জগতে তারা ঢুঁ মারেন না। কাজেই বিনিয়োগ ও উপার্জন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই কাজটি করেন।
৯. খরচের হিসাব রাখেন : অনেকেই ভাবেন ধনীরা হিসাব না করে খরচ করেন। এ ধারণা ভুল। তারা প্রতিদিন, প্রতিমাস এবং প্রতিবছরের পরিষ্কার হিসাব রাখেন।
১০. সাধ্যের ভেতরে জীবনযাপন করেন : ধনীদের জন্যে এটা কোনো মিথ্যা নয় যে, তারা হয় সাদামাটা অথবা সাধ্যের মধ্যে জীবনযাপন করেন। অর্থাৎ, অর্থ আছে দেখে নিজেকে ভাসিয়ে দেন না। এ ছাড়া চলাফেরাতেও তারা সাধারণদের মতোই কাজ করে থাকেন।
১১. ত্যাগী মানসিকতা রয়েছে : ধনী মানেই যে লেটেস্ট মডেলের দামি গাড়ি থাকতে হবে তা নয়। বিখ্যাত সব ধনীদের মনে বহু দামি গাড়ি কেনার ইচ্ছা থাকলেও তা ত্যাগ করতে প্রস্তুত। অথচ সে সাধ্য তাদের রয়েছে। আবার বড় কোনো লক্ষ্য হাসিলে তারা বর্তমান ইচ্ছার বিষয়ে ত্যাগী থাকেন।
১২. ঋণের জালে নয় : ধনীরা ঋণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু ঋণ পরিশোধে সচেতন থাকেন। ঋণের জালে এক জড়িয়ে গেলে বহু ক্ষতি ঘটে যায়। বিশেষ করে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে নতুন বিনিয়োগের জন্যে ঋণ নিয়ে থাকেন তারা।
১৩. পরামর্শ নেন : ধনীরা অর্থ বিষয়ে সব সময় অভিজ্ঞজনের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। সব মানুষের মাঝেই দুর্বলতা রয়েছে। নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রয়েছে তাদের। আর দুর্বল জায়গাগুলোতেই পরামর্শকদের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন।
১৪. স্বশিক্ষিত হন : ধনীরা ক্রমাগত নিজেকে প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। তারা স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। বহু ধনী রয়েছেন যারা উচ্চশিক্ষিত না হয়েও বহু দূর এগিয়েছেন। এর কারণ একমাত্র তারা বাস্তব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
১৫. সিদ্ধান্তের আগে হিসাব কষে নেন : ধনীরা কখনোই হুটহাট সিদ্ধান্ত নেন না। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বহু হিসাব-নিকাশ কষে নেন। যাবতীয় যোগ, বিয়োগ বা ভাগের হিসাব নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হলেই কেবলমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণে এগোতে থাকেন। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার