খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০১৬: অর্থনীতিতে গ্রেশাম’স ল বলে, ‘ব্যাড মানি ড্রাইভস গুড মানি, আউট অব সার্কুলেশন।’ এ বিপদ কম বেশি সব দেশেই। চুরি ডাকাতি দুর্নীতি জালিয়াতির টাকা ধাক্কা দিচ্ছে সাদা টাকাকে। যেখানে যত বেশি কালো টাকার উৎপাত সেখানকার অর্থনীতি তত বেশি ভঙ্গুর। অর্থনৈতিক উন্নয়নে চরম বাধা। বাংলাদেশের বিপন্নতার অন্যতম কারণ এটাই। বন্যার জলের মতো ঢুকছে পেট্রোডলার। সন্ত্রাসবাদী, মৌলবাদীরা যে টাকায় ভাসছে তার উৎস কারও জানা নেই। এ সবই খারাপ টাকা। নিরাপত্তা বাহিনীর সাধ্য নেই এ টাকার হদিশ করার। ইনটেলিজেন্সেরও নাগালের বাইরে। এর ওপর যুক্ত সাইবার জালিয়াতি। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক মানে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে এমন ঘটনা ঘটেছে। যারা কাজটা করেছে তারা যে এ লাইনে পাকা খেলোয়াড় সন্দেহ নেই। আটঘাট বেঁধে সূক্ষ্ম কারসাজিতে কাজ সেরেছে। ব্যাঙ্কে অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা পর্যন্ত টের পাননি। ব্যাঙ্কের গভর্নর আতিউর রহমানও অন্ধকারে। তিনি যখন জানলেন, সব শেষ। ব্যাঙ্কের মার্কিন অ্যাকাউন্ট থেকে খোয়া গেছে ৮ কোটি ১০ লক্ষ ডলার। এত বড় অঙ্কের সাইবার চুরি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে কেন, কোনও ব্যাঙ্কেই ঘটেনি। সরকারও ঘটনাটা জেনেছে অনেক পরে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিথ অভিযোগ করেছেন, ঘটনা এক মাস পরে পর্যন্ত তাঁকে এই খবর জানানই হয়নি। তিনি জানলেন বহু দেরিতে। এটা অবশ্যই গভর্নর রহমানের অমার্জনীয় অপরাধ। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক মানে সরকারের ব্যাঙ্ক। শুধু তাই নয়, এটা ব্যাঙ্ক অব অল ব্যাঙ্কার্স। সেখানে একটা মারাত্মক চুরির পর কর্মকর্তারা চুপ করে থাকবে? সরকারকে জানাবে না? সেটা কী করে হয়! কোনও বাড়িতে সামান্য চুরি হলেও তো পুলিশকে জানান হয়। তার মানে তো সরকারিভাবে চুরির ঘটনা নথিভুক্ত করা। এখানে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় এত বড় জালিয়াতি সরকার জানতেই পারল না। রহমান গভর্নর পদে ইস্তফা দিয়ে পার পেতে চেয়েছেন। তা হয় না। দায়িত্ব স্বীকার করলেও অব্যাহতি মেলে না। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের সিস্টেমে এত বড় ফাঁকফোঁকর গভর্নর সেটা জানতেন না।
ব্যাঙ্কের কর্ণধারই যদি না জানেন, কে জানবেন। দু’জন ডেপুটি গভর্নরকেও পদচ্যুত করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, টাকাটা ফিলিপিন্সে গেছে। সে যে দেশেই যাক, ঘুরপথে ফের বাংলাদেশে ঢুকবে না, সে গ্যারান্টি কে দেবে! বাংলাদেশের কোনও পাকা সাইবার হ্যাকারের সাহায্য ছাড়া এ কাজ হতেই পারে না। ঠিকঠাক তদন্ত হলে অপরাধীরা ধরা পড়বেই। সময় হয়ত লাগতে পারে। ব্যাঙ্কের টাকা কালো রাস্তায় ছিটকে যাওয়া আর ঘরের মেয়ে নিষিদ্ধপল্লীতে আশ্রয় নেওয়া একই কথা। টাকাটা তখন ভাল থাকে না, খারাপ হয়ে যায়। যে দেশে ঢুকবে সে দেশের ক্ষতি। বাংলাদেশ অর্থনীতি দুর্গম রাস্তা বেয়ে ওপরে উঠতে চাইছে। দরিদ্র দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশ হওয়াটাই তাদের পরীক্ষা। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কেই যদি গভীর গহ্বর তৈরি হয়, এগোনোর পথই তো পিচ্ছিল হবে। রহমান ২০০৯ থেকে গভর্নর। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় ব্যাঙ্কের নাড়ি-নক্ষত্র তাঁর জানা উচিত ছিল। তিনি কৃষি ও মহিলা উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর সময় বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারও বেড়েছে। সেই সঙ্গে এটাও মানতে হয়, এত বড় সাইবার চুরির সাক্ষীও তিনি। যা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় কল্পনাতীত। প্রাক্তন অর্থ সচিব ফজলে কবীর নতুন গভর্নর হয়েছেন। তাঁর এখন প্রধান কাজ হৃত অর্থ উদ্ধার। এখনও সময় আছে পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আগে খারাপ টাকাটা ভাল করার।