খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০১৬: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, সোহাগী জাহান তনুর মরদেহ যে জায়গাটিতে পড়ে ছিল, সেই জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। এটি অস্বাভাবিক। তাঁদের কাছে থাকা প্রথম ছবিতে ওই স্থানে ঘাস ও ছোট গাছ ছিল। কিন্তু পরে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রকৃত অবস্থার এই পরিবর্তন কাম্য নয়। সাক্ষ্য আইন অনুযায়ীও সেটি কাক্সিক্ষত নয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেই স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে মিজানুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আলামত নষ্ট হতে পারে। এটি বিচারকে ভিন্ন খাতে নিতে পারে, বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি ঘটে থাকলে যাঁরা এমনটা করেছেন তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনা দরকার। বিশেষ করে যে জায়গায় তনুর মৃতদেহ পড়ে ছিল, তা এখন পরিষ্কার করা হয়েছে। মাটি তুলে ফেলা হয়েছে। এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যদি এটা হয়ে থাকে, তবে কেন এটা করা হয়েছে, কে বা কারা করেছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এটা অবশ্যই জানা দরকার।’
তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, কেন দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। কমিশন মনে করে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের প্রয়োজন ছিল। কেননা প্রথমবারে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। লক্ষ রাখতে হবে, দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত বাড়তি কোনো প্রশ্ন উত্থাপন যেন না করে। বরং সব প্রশ্নের উত্তর যেন পাওয়া যায়। তিনি বিচারক ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে আহ্বান জানান, ‘প্রথমবার ময়নাতদন্তের সময় যদি কোনো গাফিলতি, তথ্য গোপনের চেষ্টা হয়ে থাকে, তবে এর সঙ্গে এবং পেছনে যারা যুক্ত, তাদের বিচারের আওতায় আনুন।’
অধ্যাপক মিজানুর বলেন, তনুর পরিবারকে সাহায্য করা উচিত। ন্যায়বিচারের নামে বা তথ্য সংগ্রহের নামে তাঁদের যেন হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তনুর পরিবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অগাধ ও অসীম আস্থা আছে, তাঁরা বিশ্বাস করেন ন্যায়বিচার পাবেন। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেন, কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ তাঁকে আশ্বস্ত করেছে ন্যায়বিচারের স্বার্থে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে। যে ধরনের তথ্য লাগে, তা দেওয়া হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তাতে ‘আমরা এবং তারা’ এই বিভেদ করা প্রত্যাশিত হবে না। এখানে পক্ষ হচ্ছে অপরাধী এবং ন্যায়বিচার প্রার্থী। দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। এর বাইরে কোনো বিভেদ সৃষ্টি জাতীয় স্বার্থে কাম্য নয়। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, তদন্ত দলকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। যেখানে হয়েছে সেটা একটি বিশেষ এলাকা। সেখানে প্রবেশে বিধিনিষেধ আছে। এই বিধিনিষেধ যেন তদন্তে বাধা তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানাব তদন্তের জন্য তারা যেন সব ধরনের সুবিধা দেয়। তিনি বলেন, তনুকে হত্যা করা হয়েছে। এর বিচার হতে হবে। প্রকৃত অপরাধীকে ন্যায়বিচারের আওতায় আনা হলে সবার ভাবমূর্তি উন্নত হবে। কোনো জজমিয়া নাটক, তদন্ত ভিন্ন দিকে নেওয়া হলে তা কেউ গ্রহণ করবে না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তনু হত্যার তদন্তে সফলতা পেতেই হবে। যাঁরা এখন তদন্ত করছেন, তাঁরা আলামত পেয়েছেন ভিন্ন একটি সংস্থা থেকে। সরাসরি আলামত সংগ্রহ করতে পারেননি। এ কারণে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে হবে।
মিজানুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত এলাকায় ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অপরাধীকে কত দ্রুত ধরা যায়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী কোনো তদন্ত করছে না। এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর বলেন, মধ্যরাতে কেন তনুর বাবা, মা ও ভাইকে র্যাব নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তা জানার অধিকার দেশের মানুষের আছে। কমিশন এটি জানতে চাইবে।