Sat. Mar 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

10খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০১৬: রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার আলাদাভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বৈঠকে অসন্তোষের কথা জানান তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান প্রতিনিধি দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। যা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে। নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে আপনাদের তথ্যগুলো (ইনফরমেশন) স্পেসিফিকভাবে বলতে হবে। অল্প করে বললে আমরা ঠিকভাবে পদক্ষেপ নিতে পারবো না। তখন নিরাপত্তা ঘাটতি থেকে যেতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অ্যালান বার্সিনের নেতৃত্বাধীন দলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বৈঠক শুরু হয়। ২৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত এ বৈঠকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এবং অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়।
এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক, র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ এবং ডিআইজি মনিরুল ইসলামসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) সিজে কলিনস, ডেপুটি চিফ মিশন ডেভিড মিয়ালি, ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (টিএসএ) রাসেল ম্যাকগ্লেনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সহকারী সচিব এলান বার্সিন বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি অবৈধ বাংলাদেশীদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা রাজি আছি তাদের ফেরত আনতে। তবে তার আগে এদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের নাগরিকত্বের কোনো তথ্য আছে কি-না জানাতে চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মার্কিন কর্মকর্তারা প্রমাণ আছে বলে জানিয়েছেন।
তারা এ-ও জানিয়েছেন তাদের বৈধকরণের জন্য নিয়ম কানুনের মধ্যে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অভিযোগ আছে কি-না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা নাকচ করেন। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তা বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি সারাহ সুয়লের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি বা সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা? জানতে চেয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কার্যক্রম চালাচ্ছে। দুজন বিদেশি খুনসহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে আইএসের সম্পৃক্ততা রয়েছে মর্মে যে অভিযোগ রয়েছে তা নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী তা-ও নাকচ করেন। এ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মোট ১৪ জন প্রতিনিধির সঙ্গে দুটি ভাগে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা নেই।
এখানে যারা আছে তারা দেশীয় জঙ্গি। এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আড়ালে ছিল। সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এদিকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিমান মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।
এদিকে সকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালান বারসিনের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি একটি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠেছে। এ বাস্তবতায় প্রতিটি দেশ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তাই এখানকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে আর কেউ নির্দেশনা দিতে না পারে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি টাইমলাইন নির্ধারণ করে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। বৈঠকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এজন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের রেডলাইন অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি কোম্পানি যৌথভাবে কাজ করছে। এর ফলাফল ইতিবাচক হবে বলে আমরা আশাবাদী।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়, বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও জনবল নিয়োগের পদক্ষেপ হিসেবে সিভিল অ্যাভিয়েশন অ্যাক্ট-২০১৬ মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে তা পাস হবে।
বাংলাদেশের পক্ষে বিমান মন্ত্রী ছাড়াও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম গোলাম ফারুক, সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা) আবিদা সুলতানাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।