Mon. Aug 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

24খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০১৬: দফায় দফায় সময় দিয়েও ঢাকার ট্যানারিগুলোকে সাভার চামড়া (ট্যানারি) শিল্পনগরীতে পাঠাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত হাজারীবাগে কাঁচা চামড়ার প্রবেশ ঠেকাতে বসানো হয়েছে পুলিশি পাহারা।
শেষ চেষ্টা হিসেবে গত ২৯ ফেব্র“য়ারি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ট্যানারি স্থানান্তরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন মালিকদের। বলা হয়েছিল, এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে ঢাকার হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
সেই সময় সীমা শেষ হওয়ার পর হাজারীবাগে চামড়া প্রবেশের চারটি প্রবেশপথে শুক্রবার সকাল থেকে ‘ফোর্স মোতায়েন’ করার কথা জানিয়েছেন হাজারীবাগ থানার ওসি মীর আলিমুজ্জামান।
তিনি বলেন, “অন্য কোনভাবেও যেন চামড়া না ঢোকে, সে দিকেও নজর রাখছি। আজ এই এলাকায় কোনো চামড়া ঢোকেনি।”
সকালে হাজারীবাগ এলকায় ঘুরে জানা যায়, সাভারে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসাবে কিছু ট্যানারি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু কারখানা চালু থাকলেও শুক্রবার ছুটির দিনে সেখানে কাজ বন্ধ। আবার কিছু কারাখানায় চামড়া প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলতে দেখা গেছে, কিন্তু কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
একটি কারখানার এক শ্রমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাসখানেকের কাঁচামাল তারা আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। সেই চামড়া দিয়েই কাজ চলছে।
শ্রমিকরাও জানালেন, সকাল থেকে পুলিশের গাড়ি টহল দিচ্ছে। কাঁচা চামড়া ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
চল্লিশের দশকে নারায়ণগঞ্জে দেশের প্রথম ট্যানারি শিল্প গড়ে উঠে। অল্প দিনেই এ শিল্পের পরিসর বাড়তে থাকায় ৫০ এর দশকে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান সরকার এ শিল্পকে হাজারীবাগে সরিয়ে নেয়।
এই শিল্প বাণিজ্যিক সাফল্য পেলেও ১৯৮৬ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ‘সবচেয়ে বেশি দূষণকারী’ শিল্পখাত হিসাবে হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলোকে ‘লাল’ ক্যাটাগরিভুক্ত করে।
এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়ে সরকার ওই বছর ৭ অগাস্ট পরিপত্র জারি করে। দূষণ মোকাবেলায় কার্যকর সরঞ্জাম ছাড়া নতুন কোনো কারখানা যাতে চালু হতে না পারে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয় পরিপত্রে।
দূষণ বন্ধে নানা সরকারি উদ্যোগের মধ্যে ২০০১ সালে নির্দেশনা আসে উচ্চ আদালত থেকেও। সাভারে চামড়া শিল্পনগরী করে সেখানে ট্যানারিগুলো সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।
২০০৩ সালের ১৬ অগাস্ট একনেক সভায় চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের অনুমোদন হলেও তার কাজ শেষ হতে এক যুগ পেরিয়ে যায়। হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারিকে সেখানে সরে যেতে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় সেই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে থাকে, দফায় দফায় পেছাতে থাকে ‘ডেডলাইন’।
সেই সিইটিপি শেষ পর্যন্ত আংশিকভাবে চালু হয়েছে চলতি বছর জানুয়ারিতে। এই দীর্ঘ সময়ে টানারি সরাতে কারখানা মালিকদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে অন্তত ২০ বার।
ছোট-বড় মিলিয়ে হাজারীবাগের যে ১৫৫টি ট্যানারির সাভারে যাওয়ার কথা, তার মধ্যে ২৮টির মালিককে গত জানুয়ারিতেও উকিল নোটিস পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ট্যানারি স্থানান্তরের নির্দেশনা না মানায় দশ কারখানার মালিককে গত ২৩ মার্চ তলব করেছে হাই কোর্ট।
মালিকদের গড়িমসিতে ক্ষুব্ধ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু গত ১০ জানুয়ারি বলেন, যেসব ট্যানারি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হাজারীবাগ ছাড়বে না, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এর দুই দিন পর ১৩ জানুয়ারি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, “তাদের নোটিস পাঠানো হবে। যেহেতু এটা আইনি প্রক্রিয়ার ব্যাপার, সেহেতু নোটিসের মাধ্যমেই তা করতে হবে। হুট করে করা যাবে না।”
নির্দেশ অমান্যকারী ট্যানারি মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এই ট্যানারিগুলোর কারণে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যাৃসমস্ত নদী শেষ হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ট্যানারি মালিকের সাভারে প্লট আছে, নির্দেশ না মানলে তা বাতিল করা হবে। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্য বহু ব্যবসায়ী অপেক্ষা করছে, প্রয়োজনে তাদেরকে দিয়ে দেব।”
পরে ট্যানারি মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় ট্যানারিগুলোতে চামড়া সরবরাহ বন্ধের রাস্তায় গেল সরকার।

অন্যরকম