Sat. Mar 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

46খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০১৬: বানান ভুলে আটকে যাওয়া রিজার্ভের ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানোর পেছনে জড়িত ছিল এক জাপানি নাগরিক। তার নাম সাসুকি থাদাসি। শ্রীলঙ্কায় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ঋণ হিসেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার কাছ থেকে ওই অর্থ আনার কথা বলা হয়।
বৃহস্পতিবার কলম্বোর সিআইডি পুলিশ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মেজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। চুরির এ ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কার শালিকা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। সিআইডি এ ফাউন্ডেশন পরিচালিত সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তদন্ত করছে।
কলোম্বোর প্রধান মেজিস্ট্রেট গিহান পিলাপিতিয়ারের আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতে সিআইডি জানিয়েছে, চুরির ঘটনায় শালিকা ফাউন্ডেশনের পরিচালকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এতে জানা যায়, ৪ ফেব্রুয়ারি সাসুকি থাদাসি নামে ওই জাপানি নাগরিক প্যান এশিয়া ব্যাংকের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানোর চেষ্টা করেন।
সিআইডি আরও জানায়, সুইফট (বিশ্বব্যাপি আর্থিক লেনদেনের বার্তা প্রদানকারী ব্যবস্থা) বার্তার মাধ্যমে টাকা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। যাতে বলা হয়, বাংলাদেশের পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড জাইকার কাছ থেকে ২০১০ সালে ঋণ হিসেবে নেওয়া ওই ২০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার পর তা শ্রীলঙ্কায় শালিকার অ্যাকাউন্টে জমা করতে পাঠানো হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, রিজার্ভের চুরির ২০ মিলিয়ন ডলার এক ‘বন্ধু’র মাধ্যমে শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন শালিকা প্রধান হ্যাগোডা গ্যামেজ শালিকা পেরেরা। এ টাকা চুরির তাও জানতেন না বলে তিনি জানান। তবে পেরেরার বক্তব্য যাচাই করে দেখা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যে বন্ধুর কথা তিনি বলছেন, তার ফোন নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা তিনি দিলেও সেই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
কলম্বো পুলিশ বলেছে, তারা পেরেরার সেই বন্ধুকে এরইমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সেই ব্যক্তি আবার ওই জাপানি মধ্যস্থতাকারীর কথা বলেছেন, যিনি সেই তহবিলের যোগাড়যন্ত্র করে দিয়েছেন।
এদিকে, কলোম্ব আদালত সালিকা ফাউন্ডেশনের এক পরিচালক সিরানি ধাম্মিকা ফার্নান্দোর ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সিআইডি বলছে, ধাম্মিকা ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর শালিকা ফাউন্ডেশনের পরিচালক বোর্ড থেকে অবসর নিয়েছেন বলে জানা যায় । যার ফলে তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিয়ে বাহল রাখা প্রয়োজন।
এর আগে আদালত ইমিগ্রেশন বিভাগকে শালিকা ফাউওন্ডেশনের ছয় পরিচালকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনায় অভিযোগ আনার পর এ নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রধান মেজিস্টেট সিআইডির অনুরোধের প্রেক্ষিতে গ্যামেজ শালিকা পেরেরা, ডন প্রসাদ রোহিথা, নিসাš’া নলকা, সঞ্জিবা তিসা বন্দরা ও সিরানি ধাম্মালিকা ফার্নান্দোর দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
রিজার্ভের সর্বমোট ১০০ মিলিয়ন চুরির চেষ্টায় ৩৫টি ভুয়া অনুরোধ পাঠায় হ্যাকাররা। এর মধ্যে ৩০টি আটকে গেলেও একটিতে ওই ২০ মিলিয়ন ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকে, পেরেরার শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায় ডয়চে ব্যাংকের হাত ঘুরে। তাদেরই সন্দেহের কারণে শেষ পর্যন্ত শালিকার অ্যাকাউন্টের ওই অর্থ আটকে যায়।
অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধে প্রাপকের জায়গায় ‘ফাউন্ডেশন’ বানান ভুল থাকায় ডয়চে ব্যাংক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। এর মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে, অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধটি ছিল ভুয়া।
অবশ্য ততক্ষণে আরও চারটি অনুরোধে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে ক্যাসিনোর মধ্যে পাচার হয়ে যায় এর একটি বড় অংশ।-ডেইলি নিউজ, রয়টার্স।