Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

39 খোলা বাজার২৪, রোববার, ৩ এপ্রিল ২০১৬: হঠাৎই প্রচণ্ড ধাক্কা। এত দিন ধরে যে অ্যাকশনে বল করে আসছেন সেটা নাকি সন্দেহজনক! চেন্নাইয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে বোলিং অ্যাকশনের বৈধতা। সেই কয়েক দিন কি দুঃসহ সময় কেটেছে তাসকিন আহমেদের, সেটা তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। আর জানেন আল আমিন হোসেন।
২০১৪’এর সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে আম্পায়ারদের সন্দেহের তালিকায় আসে আল আমিনের বোলিং অ্যাকশন। পরে চেন্নাইয়ে পরীক্ষা দিয়ে ছাড়পত্র পেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার থিতু হতে লেগে গিয়েছে অনেকটা সময়। এ রকম পরিস্থিতিতে একজন বোলারের মানসিক অবস্থা কি দাঁড়ায়, সেটা আল আমিনের চেয়ে ভালো বুঝবেন কে! ‘এটা জীবনেরই একটা পরীক্ষা। অনেক স্নায়ুচাপে ভুগতে হয় এই সময়ে’—কাল মুঠোফোনে বলছিলেন এই পেসার।
বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর যাদের দেওয়া সাহস তাসকিনকে শক্ত রেখেছিল, আল আমিন তাদের একজন। তাসকিন নিজেও এর আগে তা বলেছেন। কাল আল আমিনও জানালেন, ‘আমি এক শ ভাগ নিশ্চিত ছিলাম তাসকিনের অ্যাকশনে সমস্যা নেই। তাকেও বারবার এটাই বলেছি। খোলা চোখে মনে হয় না অ্যাকশনে ত্রুটি আছে। পরীক্ষার পর নিশ্চয়ই সেটা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ চেন্নাইয়ের রামাচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে যেহেতু তাঁরও পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে, সে সম্পর্কেও তাসকিনকে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছিলেন আল আমিন।
কিন্তু কিছুই কাজে লাগল না। চেন্নাই থেকে দুঃসংবাদই এল। অবৈধ অ্যাকশনের দায়ে বোলিং থেকে নিষিদ্ধ হয়ে গেলেন তাসকিন। খবরটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না আল আমিনের, ‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না তাসকিনের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটেছে। আমরা কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, পরীক্ষা দিলে তো ওর অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ দূর হয়ে যাওয়ার কথা। অবৈধ হবে কেন?’
আল-আমিনের মতো এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষেরই। তবু বাস্তবতা না মেনে উপায় নেই। তবে আল আমিন আশাবাদী, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আবার বোলিংয়ে ফিরতে পারবেন তাসকিন।
তাসকিনের জন্য সময়টা খারাপ গেলেও এ রকম পরিস্থিতি আগেই পার করে আসা আল আমিন আছেন ফুরফুরে মেজাজে। ৮ উইকেট নিয়ে আজকের ফাইনালের আগ পর্যন্তও মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে আছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শীর্ষ ১০ বোলারের মধ্যে। বোলার হিসেবে আল আমিনকে ভবিষ্যতের জন্য আরও আত্মবিশ্বাসী করছে এই সাফল্য, ‘বড় জায়গায় ভালো করলে আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বেড়ে যায়। আমারও খুব ভালো লাগছে যে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে ভালো বল করতে পেরেছি।’ আট উইকেটের মধ্যে আল আমিন সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছেন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সুরেশ রায়নার উইকেট নিয়ে, ‘রায়না তখন সেট হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় তার উইকেটটা খুব দরকার ছিল আমাদের জন্য।’
বিশ্বকাপ থেকে ফিরে এখন ছুটি কাটাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। অনেকে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। অনেকে গেছেন বাড়িতে। আল আমিনও এখন ঝিনাইদহে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ঠিক সামনেই বাড়ি। সেখানে থেকে দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে সিটি কলেজ মাঠ। বাড়িতে থাকলে দিনে অন্তত একবার এই মাঠে আসতেই হবে। কাল যাচ্ছিলেন সন্ধ্যার পর। আল আমিনকে যখন মুঠোফোনে ধরা হলো, তিনি তখন সিটি কলেজ মাঠের পথে। বন্ধুরা অপেক্ষা করছেন। মাঠে গেলে দেখা হবে আরও অনেকের সঙ্গে। এত ক্রিকেট খেলে, এত দেশ ঘুরেও এই মাঠের আকর্ষণ কমে না। ‘বাড়িতে থাকলে প্রতিদিন ওখানে একবার যেতেই হবে। না গিয়ে উপায় নেই। সবার সঙ্গে দেখা হয়, অনেকে ছবি তোলেৃভালোই লাগে আমার’—সিটি কলেজ মাঠ নিয়ে আল আমিনের কণ্ঠে আবেগের বাষ্প।তাসকিনের পাশে আল আমিন