Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

50খোলা বাজার২৪, রোববার, ৩ এপ্রিল ২০১৬:  সুদের হার কমানোর পরও বেড়েই চলেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, যা সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের ‘বোঝা’ হিসাবেই গণ্য হয়।
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্র“য়ারি) ৩৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।
এই আট মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মোট পরিমাণ থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের পরিমাণ বাদ দেওয়ার পর যেটি অবশিষ্ট থাকে সেটাকে সঞ্চয়পত্রের নিট বা প্রকৃত বিক্রি বলা হয়। নগদায়নের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সুদসহ আসল পরিশোধ করা হয়।
সুদ-আসল পরিশোধের পর যে নিট অর্থ জমা থাকে সেটাকেই সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বা ধার বলে হিসাব করা হয়। আর এজন্য সরকারকে সুদ গুণতে হয়।
এ হিসাবে জুলাই-ফেব্র“য়ারি সময়ে ২০ হাজার কোটি টাকার যে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তারজন্য সরকারকে মোটা অংকের সুদ দিতে হচ্ছে।
এর ফলে সরকারের ঋণের ‘বোঝা’ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।
তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের অন্য সব পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে গেছে বলা চলে। ব্যাংকে টাকা রাখলে ৭/৮ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। শেয়ার বাজারের অবস্থা তো দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।”
“সুদের হার কমানোর পরও ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকেই ঝুঁকছে মানুষ।”
সে কারণেই সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ছে বলে মনে করছেন বি আইডিএসের গবেষক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য পর‌্যালোচনা করে দেখা যায়, বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে যে টাকা ধার করার কথা ভেবে রেখেছিল, আট মাসেই তার চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়া হয়ে গেছে।
তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-ফেব্র“য়ারি সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৮৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। অথচ পুরো অর্থবছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা এ খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল বাজেটে।
এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটেও সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকার ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল। বছর শেষে তা ২৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।
সর্বশেষ ফেব্র“য়ারি মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। ওই মাসে সবমিলিয়ে পাঁচ হাজার ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।
জানুয়ারি মাসে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকা।
ফেব্র“য়ারি মাসে সুদ-আসল পরিশোধের পর নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৮৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর জানুয়ারিতে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল আরও একটু বেশি; ৩ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এক হাজার ৯৭৬ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। অগাস্টে তা বেড়ে ২ হাজার ৬৯১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৫৪ কোটি, ২ হাজার ৩৫৩ কোটি এবং ২ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।
অবশ্য ডিসেম্বরে তা কমে এক হাজার ৯৮০ কোটি টাকায় নেমে আসে।
বিক্রি অস্বাভিাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই ঋণের বোঝা কমাতে গত বছরের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়।
মে মাসের আগ পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে প্রতি মাসে এক হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পেতেন একজন গ্রাহক। সুদের হার কমায় এখন পাচ্ছেন ৯১২ টাকা।