খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০১৬: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে।
সোমবার বেলা ৩টার দিকে উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকার এ ঘটনায় নিহত একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পংকজ বড়ুয়া।
তার নাম জাকির আহমদে (৩৫)।
আহত আরও পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জানিয়ে এএসআই পংকজ বলেন, “ছয়জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ জাকিরকে মৃত ঘোষণা করেন।”
হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আবু খান (৫০), আবদুল খালেক (২৫), মোহাম্মদ জহির (৩০), আনসার উদ্দিন (৩০) ও মজিবুর রহমান (২০)।
এ ঘটনায় এর আগে তিনজন নিহত হওয়ার কথা শুনতে পাওয়ার কথা জানান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, “তিনজন নিহত হওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু কোনো ডেডবডি পাইনি; সন্ধান চলছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবা“াতারা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের এই সংঘর্ষে পক্ষের লোকজনও অংশ নেয়। সংঘর্ষে গুলিতে কয়েকজন নিহত হয়েছে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সাতকানিয়া সার্কেলের এএসপি একেএম এমরান ভুইয়া।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে স্থানীয় একটি পক্ষ সোমবার ‘বসতভিটা রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়। এর পাল্টা হিসেবে তাদের বিরোধীপক্ষও সমাবেশ ডাকে।
এএসপি এমরান বলেন, উভয়পক্ষে সংঘর্ষের আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন ওই এলাকায় সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে।
“দুপুরে ওই এলাকায় পুলিশ অবস্থান নিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধীরা পুলিশের উপর হামলা করে। পুলিশ চলে আসতে চাইলে রাস্তা অবরোধ করে হামলা চালায় তারা।”
এসময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালায় দাবি করে এমরান ভুইয়া বলেন, “পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। দু’পক্ষের গোলাগুলিতে সাত পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।”
বাঁশখালী উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রেজাউল হক বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত ১৯ জনকে ভর্তি করা হয়; তাদের অধিকাংশই পুলিশ।
আহতদের মধ্যে এক আনসার সদস্যসহ ছয়জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, গত রোববার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ স্থানীয় সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। এর প্রতিবাদেই সোমবার সমাবেশ ডেকেছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধীপক্ষ।
গণ্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনায় ‘১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র’ যৌথভাবে নির্মাণ করছে এস আলম গ্রুপ ও চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বিদ্যুকেন্দ্রটির ভূমি অধিগ্রহণ চলছে।
ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয়রা ওই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করছে।
তাদের অভিযোগ, এস আলম গ্রুপ পুর্নবাসনের সুযোগ না দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হলে বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের লবণ ও চিংড়ী চাষে জড়িতরা বেকার হয়ে পড়বেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।